Header Ads

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ : কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে || শাহরিয়ার সোহাগ

                                ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic bangla poem, bangla poem for love, small bangla poem, sh


কাশ্মীরের পেহেলগাঁওকাণ্ডের পর যুদ্ধের দামামা বেজেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, বাণিজ্য-জাহাজ চলাচল বন্ধ-শুধু এসবেই থামেনি। শেষ পর্যন্ত সরাসরি হামলা-পালটা হামলায় জড়িয়েছে দুই দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর এই যুদ্ধ বড় হলে বাংলাদেশে অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে কোনো পক্ষ অবলম্বন না করে তারা পরিস্থিতি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, দুই দেশ (ভারত-পাকিস্তান) যেন বড় আকারে যুদ্ধে না জড়ায় সেই ডিপ্লোমেসির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে। 

একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বা সার্বিকভাবে কী কী সমস্যা হবে-তা নিয়ে আগে থেকেই হোমওয়ার্ক করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এছাড়া প্রভাব মোকাবিলার কৌশল কী হবে তাও ঠিক করে রাখার কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধ অনিশ্চয়তায় ভরা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরেক অনিশ্চয়তা যোগ হলো। আমদানিসহ প্রভাব পড়তে পারে এমন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে ‘প্ল্যান বি’ তৈরির কথাও বলেছেন তারা। 

এখানে দেখা দরকার এটা বড় যুদ্ধে গড়ায় কিনা। যদি এই পালটাপালটি সার্জিক্যাল স্টাইকের মধ্যেই সীমিত থাকে তাহলে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। তবে ছোটখাটো প্রভাব তো ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। বড় আকারে যুদ্ধ হলে তখন বড় প্রভাব তো পড়বেই। আমাদের সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হলে কোনো সন্দেহ নেই দেশের অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব পড়বে। তবে আমাদের আশা থাকবে যে, বড় আকারে যুদ্ধে তারা যেন না যায়।

আসলে আমাদের তো সেই ধরনের কাঠামো গড়ে ওঠেনি। আমাদের সরকারগুলো হয় দিল্লিপন্থি নয়তো ইসলামাবাদপন্থি হয়ে যান। বাংলাদেশপন্থি হন না। সেটা হলে হয়তো আমরা আজকে দুটো দেশকেই ঢাকায় আমন্ত্রণ জানাতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেই ধরনের কাঠামো তৈরি করতে পারিনি। এখানে বড় পেশাদারিত্ব দরকার। জ্ঞান-গবেষণার বিষয় আছে। যেগুলো সম্প্রতি দেখছি কাতার, সৌদি আরব এমনকি টার্কিও বড় ধরনের নেগোসিয়েশন করার সক্ষমতা রাখে। সিঙ্গাপুরও রাখে। কিন্তু আমরা সেই পর্যায়ে এখনো যেতে পারিনি। যদিও আমাদের দেশের পক্ষ থেকে স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে, দুই পক্ষই যেন যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার মনে হয় না এই মুহূর্তে করতে পারবে। তবে আমাদের হোমওয়ার্ক করে রাখতে হবে। যদি বড় যুদ্ধ হয় তাহলে বাংলাদেশে কী ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে। কী ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবে। এগুলো বড় আকারেই আমার মনে হয় এখন থেকে ট্রেসিং করা দরকার। 

প্রতিবেশী দেশে সংঘাত বা যুদ্ধ কেউই চায় না। এটা কারও জন্যই ভালো নয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের একটা ভালো বোঝাপড়া চলছিল। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল। ওদের লোক আসছিল বা আমাদের লোক যাচ্ছিল। আমার মনে হয় এটাতে একটু স্থবিরতা এসেছে বা আসতে পারে। আমরা আমদানি বাণিজ্য শুরু করেছিলাম সেটাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর পটপরিবর্তনের পরে দিল্লির তো একটা জটলা লেগেই আছে।

আমাদের একটা উদ্বিগ্নের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। দুদেশের কাছেই তো পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের কোনো পক্ষই নেওয়া উচিত নয়। যদি সম্ভব হয় কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে নেগোসিয়েশন করা যেতে পারে। দুই পক্ষকেই শান্ত রাখার ডিপ্লোমেসিগুলো বাংলাদেশ করতে পারে। আমরা হয়তো তেমন নেগোসিয়েটর নই কিন্তু এটা করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক পথ আছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে পরামর্শ দিতে পারি। সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আপনি তো ভালো থাকবেন না।

এটা সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা আমি আশা করি হবে না। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে বিশ্বনেতারা এটা নিয়ে বলেছেন। কিন্তু যদি এটা কোনোভাবে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে টার্ন নেয় তাহলে এটা ভয়াবহ ঘটনা হতে পারে। তিনি বলেন, প্রতিবেশীর কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে তার প্রভাব তো প্রতিবেশীর ওপর পড়বেই। আপনার পাশের ঘরে যদি আগুন লাগে, আপনার বিল্ডিং বা ঘরেও আগুন লাগতে পারে বা এর উত্তাপ তো আপনার গায়েও লাগবে। এটা খুবই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অতীতে কোনোদিনই কোনো পক্ষ নেয়নি। বাংলাদেশের জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের যে চেতনা সেটা ফলো করতে হবে। এখানে কোনো পক্ষ নেওয়া নির্বুদ্ধিতা হবে।

বাংলাদেশের কোনো পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে একটা বিষয় দেখতে হবে আরেকটা প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গেও কিন্তু আমাদের সম্পর্ক ভালো নয়। আমরাও কিন্তু শান্তিতে নেই। হয়তো ঢাকা শহরে বসে আমরা বিষয়টা অতটা উপলব্ধি করতে পারছি না। সীমান্তবর্তী এলাকায় যারা আছেন তারা কিন্তু বিষয়টা উপলব্ধি করছেন যে, বাংলাদেশের জন্য একটা মহাসংকট আসতে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যখন অন্যদিকে টেনশন তৈরি হয় তখন আমাদের কোনো পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে অবশ্যই তার নিরপেক্ষ অবস্থানটা সমুন্নত রাখতে হবে।

ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধ অনিশ্চয়তায় ভরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরেকটি অনিশ্চয়তা যোগ হলো। তাদের মতে, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ পুরো এই অঞ্চলকেই অস্থিতিশীল করবে। সেই সঙ্গে প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অশনিসংকেত বিরাজ করছে। এটি নির্ভর করছে যুদ্ধটা কত দীর্ঘায়িত হবে তার ওপর। তবে আশার কথা হচ্ছে অতীতে ভারত-পাকিস্তানের সব যুদ্ধই স্বল্পমেয়াদি ছিল। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কেননা বর্তমানে দুদেশের হাতেই পারমাণবিক বোমা রয়েছে, যা আগের যুদ্ধগুলোর সময় ছিল না। তাই এবার এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে আমদানি, যোগাযোগসহ অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য আছে। সেক্ষেত্রে যদি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের ব্যাপ্তি ও সময় বেশি হয় সেটি অবশ্যই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত হবে। কেননা ভারত থেকে আমাদের অনেক খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। যুদ্ধের কারণে সেসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। ফলে দেশের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা থাকে। এর প্রভাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। 

বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনিতেই অনিশ্চয়তায় ভরা। এর ওপর ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ নতুন আরেকটি বড় ধরনের অনিশ্চয়তা যুক্ত করল। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার বড় দুটি দেশ যখন সংঘাতে জড়িয়ে পরে তখন আঞ্চলিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এর নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই প্রতিবেশী হিসাবে আমাদের দেশে পড়বে। ভারত থেকে আমাদের প্রচুর আমদানি করতে হয়। অনেক খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল বলা যায়। যুদ্ধ বেশিদিন চললে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এই যুদ্ধের ফলে আমাদের দেশে কর্মসংস্থান কমবে। সেই সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটবে। জাহাজ, বিমানসহ সব ধরনের যানবাহনের ভাড়া বাড়বে। পণ্য আমদানির খরচ বাড়বে। দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা আছে। দেশে বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি এমনিতেই স্থবির অবস্থায় আছে। এর ওপর আঞ্চলিক সংঘাত দেশের অর্থনীতিকে আরও বেশি দুর্দশাগ্রস্ত করবে। 

ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক বাণিজ্য আছে। বিশেষ করে আমরা অনেক বেশি আমদানি করি। রপ্তানি করি কম। আমরা খাদ্যপণ্য, শিল্প উৎপাদন পণ্য বিশেষ করে সুতা, তুলা, কাপড়, এক্সেসরিজ, পেঁয়াজ ইত্যাদি আমদানি করে থাকি। যুদ্ধের কারণে যদি উৎপাদন ব্যাহত হয় তাহলে ভারত রপ্তানির চেয়ে দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোর প্রতি বেশি নজর দেবে। তখন যদি হঠাৎ করে রপ্তানি বন্ধ করে তাহলে আমাদের জন্য সমস্যা হবে। তাই আমদানিকারকদের ‘প্ল্যান বি’ তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ বিকল্প বাজার খুঁজে রাখতে হবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে যাতে ওইসব বাজার থেকে আমদানি করা যায়। এর আগে ’৪৮, ’৬৫, ’৭১ এবং সর্বশেষ কারগিল যুদ্ধ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দু-চার সপ্তাহ স্থায়ী ছিল। কিন্তু তখন কারও হাতেই পারমাণবিক অস্ত্র ছিল না। এখন তো দুদেশের হাতেই এই অস্ত্র আছে। একবার যদি কোনো দেশ টিপ দেয়, তাহলে অপর দেশও টিপ দেবে। এর কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই সরকারকেও কূটনৈতিকভাবে ‘প্ল্যান বি’ করা উচিত। যাতে কোনো দেশের পক্ষেই সমর্থন না দিয়ে নিরপেক্ষ থাকা যায়। জাতিসংঘে কোনো আলোচনা হলে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে হবে। 

ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য পরিবেশকে অস্থির করে তুলতে পারে। আকাশপথ ও স্থলসীমান্তে আঞ্চলিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। যার স্বল্পমেয়াদি প্রভাব বাংলাদেশের বাণিজ্যের ওপরও পড়তে পারে। তবে বাংলাদেশের বহুমুখী ও স্থিতিশীল বাণিজ্য কাঠামো এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম।

ভারতের সঙ্গে আমাদের বার্ষিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্প্রসারিত বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমাদের জন্য বিকল্প উৎস হিসাবে কার্যকর হতে পারে। ডিসিসিআই মনে করে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নয়-আমরা শান্তির পক্ষে। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীতিতে আমরা বিশ্বাসী এবং আঞ্চলিক শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। তাই ডিসিসিআই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযম ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানায়, যাতে দক্ষিণ এশিয়া শান্তিপূর্ণ ও ব্যবসাবান্ধব অঞ্চল হিসাবে গড়ে ওঠে।

No comments

Powered by Blogger.