সিঙ্গাপুরবাসীর দীর্ঘজীবী হওয়ার রহস্য || শাহরিয়ার সোহাগ
সিঙ্গাপুর তার কঠোর নিয়ম আর কঠোর শাস্তির জন্য পরিচিত৷ বিশেষ করে, অস্বাস্থ্যকর বা বিপজ্জনক জিনিস যেমন ধূমপান, অ্যালকোহল, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো ইত্যাদির জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা আছে৷ এছাড়া সিঙ্গাপুর আরেকটি বিষয়ের জন্যও পরিচিত৷ সেটি হলো মানুষের গড় আয়ু৷ বর্তমানে সেটি ৮৫৷ কিন্তু সেটি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?
লোই কক ইয়ং সম্প্রতি তার ১০০তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন৷ এতদিন তার বেঁচে থাকার রহস্য কী? এ বিষয়ে তার মেয়ে তান আই ফান জানান, ‘‘আমার মনে হয়, শুধু সাধারণভাবে জীবনযাপন করা, ভালো ঘুমানো, পরিবার গড়ে তোলা, এটাই ছিল তার চাওয়া৷ খুবই সাধারণ জীবন৷ গ্ল্যামারাস জীবনের প্রতি তার কখনও আকর্ষণ ছিল না৷ দামি খাবার খেতেই হবে, এমনও তিনি মনে করতেন না৷ সবকিছুই একেবারে সাধারণ ছিল৷''
কিন্তু তিনি কখনোই একাকী বা একঘেয়ে বোধ করেন না৷ সিঙ্গাপুরের ৮০ শতাংশ মানুষের মতো মিসেস লোই এইচডিবি ফ্ল্যাটে থাকেন৷ সরকারি এই বাসাগুলো সিঙ্গাপুরবাসী কম দামে কিনতে পারেন৷
অনেক বেশি সুন্দর নয়, তবে ভালোবাসা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়৷ আর ভাবনাটিও পরিশীলিত৷
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সেখানে একে অপরের সাথে মিলেমিশে বাস করেন - শুধু একে অপরের পাশাপাশি নয়৷
ভবনগুলিতে প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটতে থাকে৷ আর বিভিন্ন ধরনের কোর্সও থাকে৷
ইয়ং এর মতোই এমন ভবনে থাকেন ফারিদা ফ্লুরশাইম আর চে মোই কিউ৷ তারা পিলাটিস সেশনে অংশগ্রহণ করেন৷ কারণ, তারা জানেন, সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মতোই হাত-পা নাড়াচাড়া আপনাকে তরুণ রাখে৷ ব্যায়াম মেজাজও ভালো করে, আর মানসিক চাপ কমায়৷
এমন ভবনে থাকা সম্পর্কে ফারিদা ফ্লুরশাইম বলেন, ‘‘আমরা সবাই এখানেই থাকি৷ নীচে দোকান আছে, এটা আমাদের জন্য খুবই আরামদায়ক৷ নীচে সবকিছু আছে, একটি কফিশপ, খাওয়ার জায়গা, সব৷''
সিঙ্গাপুর সরকার কোনো কিছুকেই সুযোগের উপর ছেড়ে দিতে পছন্দ করে না, এমনকি নাগরিকদের আয়ুও নয়৷
মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে উৎসাহিত করার উপর ভিত্তি করে সেখানকার নগর পরিকল্পনা গড়ে তোলা হচ্ছে৷ মাত্র ১০ মিনিট হাঁটলেই যেন মানুষ পার্ক, সবুজ স্থান বা বন্য প্রকৃতিতে যেতে পারেন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে৷ সেখানকার গণপরিবহন দক্ষ, সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য৷ আর গাড়ি চালানো ব্যয়বহুল৷ এমন নগর পরিকল্পনা গড়ে তুলতে সিঙ্গাপুরের লাখ লাখ ডলার খরচ হচ্ছে৷ তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর বোঝা কমাবে - আর এটাই চায় সরকার৷
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে একটি ‘সেন্টার ফর হেলথ লনজেভিটি' আছে৷ সেখানে একটি শহর কীভাবে তার নাগরিকদের যতটা সম্ভব দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে৷
সেন্টার ফর হেলথ লনজেভিটি এর অধ্যাপক আন্দ্রেয়া মায়ার বলেন, ‘‘আমরা ধরেই নিই, একজন ব্যক্তি কী করবেন, না করবেন, সেটা তার সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু আমরা জানি, একজন মানুষকে ভালো কাজের সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করতে একধরনের মানসিক প্ররোচণা দরকার, সিঙ্গাপুরে আমরা সেটাই করি৷ আমরা ব্যক্তিদের এমন কিছু কাজের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করি, যা তার পছন্দের বিষয়ের তুলনায় স্বাস্থ্যকর৷''
সিঙ্গাপুরে আজ জন্মগ্রহণকারী মানুষের গড় আয়ু ৮৫ বছর৷ ধনী এই নগর-রাষ্ট্রটি এই বিষয়েও বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করে আছে৷



No comments