মানুষ -- ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ১১
পরদিন সকালে সবাই জাকিরের দোকানে বসে বাংলা সিনেমা দেখছে। এলাকার
দুই পাতি নেতা রুস্তম আর কামাল নিজেদের পাওয়ার দেখানোর জন্য গুন্ডা পান্ডা নিয়ে
মহল্লায় এসেছে। নিজেরা গুন্ডা হইলেও তারা হানাহানি একদম পছন্দ করেনা। তাই নিজেদের
ক্ষমতা দেখানোর জন্য নিজেদের চ্যালাব্যালা বাদ দিয়ে শুধু তারা দুইজন মারামারি
করতে চাইলো। রুস্তম হচ্ছে লিয়াকতের ডান হাত আর কামাল হচ্ছে দেলোয়ারের ডান হাত।
পাতিনেতা কিংবা গুন্ডাদের লিডার হলে সিনেমাতে সবাই সাদা রঙের জামা না হয় পাঞ্জাবি
পরে। রুস্তম পরেছে সাদা পায়জামা, সাদা পাঞ্জাবি। গলাতে একটা লাল ওড়না। বড় চুল
আর মোটা গোফ। কামালের চান্দি ছিলা, কানে দুল, সাদা শার্ট প্যান্ট, সাদা কোর্ট।
কালো বলতে শুধু চোখের সানগ্লাস। ব্যাচ, দুজনের মারামারি শুরু। অনেকক্ষণ হাত পা
চালাচালি করলো কিন্তু কেউ কারো গায়ে টাচ্ করতে পারছে না। হঠাৎ কামাল সিস্টেমে
রুস্তমের নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে ওর মুখ ভসকাই দিলো। নিজের রক্ত দেখে নিজের ভিতরে
প্রতিশোধের আগুন টগবগ করে জ্বলার আগেই কামাল আবারো রুস্তমের গাল, কান, পেট গরম করে
দিল। রুস্তমের এভাবে মার খেতে দেখে রুস্তমের এক চ্যালা দৌঁড়ায় গিয়ে রুস্তমের
মাকে ডেকে নিয়ে আসলো। এদিকে রুস্তমকে আধমরা করে কামাল আর কামালের লোকজন তুলে
নিয়ে গেল। রুস্তমের মা এসে দেখে ততক্ষণে রুস্তমকে তুলে নিয়ে গেছে। রুস্তমের মা
বসে কাঁনতেছিল। সেই দিক দিয়েই যাচ্ছিল মোটা, দাঁড়িওয়ালা, টুপি পরা এক বয়স্ক
লোক। রুস্তমের মা তাকে চিনে ফেলে। দৌঁড়ে গিয়ে তার কলার ধরে কুত্তার বাচ্চা বলে
চিল্লায়ে ওঠে। তবে তার নাম কুত্তার বাচ্চা না। তার নাম মফিজ। এই মফিজ ই নাকি
রুস্তমের বাবার হত্যাকারী। তবে এই মফিজ বাঁচার জন্য সহানুভূতি দেখিয়ে রুস্তমের
মাকে তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করে। তখন রুস্তমের মা মফিজকে জানায় কামাল ও কামালের
লোকজন তার ছেলে রুস্তমকে ভসকায়ে আধমারা করে তুলে নিয়ে গেছে লিয়াকতের কাছে।
লিয়াকতের নামটা শুনেই মফিজের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাইল।
তারপর মফিজ রুস্তমের মাকে বললো এই লিয়াকত ই তো রুস্তমের বাবার হত্যাকারী। এখন সে
রুস্তমকেও মেরে ফেলবে। তাড়াতাড়ি রুস্তমকে বাঁচাতে হবে। আর রুস্তমকে বাঁচানোর
জন্য যেতে হবে কামালের মায়ের কাছে। কারণ কামাল ওর মাকে খুব ভালোবাসে। তাই ওরা
সবাই দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে গেল কামালের বাড়িতে। কামালের মা দরজা খুলতেই রুস্তমের মা
তাকে চিনে ফেলে। এই কামালের মা পঁচিশ বছর আগে রুস্তমদের বাড়িতে বুয়ার কাজ করতো।
নিজের বাচ্চাকাচ্চা হয় না বলে কামালকে চুরি করে সে পালিয়ে আসে। এতক্ষণ যে কামাল
আর রুস্তম মারামারি করছিল তারা দুইজন আপন দুই ভাই। আর রুস্তম আর কামাল যেই লিয়াকত
আর দেলোয়ারের হয়ে কাজ করে তারা ই রুস্তম আর কামালের বাবার আসল হত্যাকারী। এবার
ওরা সবাই মিলে দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে যাচ্ছে কামালের আস্তানার দিকে। গিয়ে দেখে
কামাল রুস্তমকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ইচ্ছামত ভসকাইতেছে।
কাল জুবু আর দিচু ওই মানুষটারে এই রুস্তমের মত ভসকায়ে দিছে। - বলেই
হেসে দিলো টুকি।
সে আর বলতে। কাল দেখলি না ফার্মেসীতে। লোকডা ক্যামনে পোতায়ে ছিল।
দেখেই মন ভালো হয়ে গেছে আমার। শালা এখন থেকে আমাদের যে কাউকে দেখলেই আল্লাহরে
ঢাকবে। - যোগ করলো ইশি।
ওই মানুষটার রক্তও দেখলাম লাল। আমাদের রক্তর মত। - বললো তাহি।
হ্যাঁ তো, জানিস না। সব প্রাণীর রক্তই লাল। খালি টিকটিকির রক্ত
নাকি সাদা। - উত্তর দিলো গুলু।
তাই নাকি? টিকটিকি দেখতে কেমন রে? - প্রশ্ন করলো তাহি।
দেখবি কি করে? মানুষ তো কোনো প্রাণীরেই বাঁচতে দেয় না। নিজের খেয়াল
খুশিতে যাকে তাকে মেরে ফেলে। - উত্তর দিলো ইকি।
মানুষ নিজেদেরকে সবচে সভ্য জাতি হিসেবে দাবি করে। তবে মানুষ যে
সত্যিই সভ্য না, সেটা মানুষও জানে। - বললো টুকি।
জামা কাপড় পরলেই কি আর সভ্য হওয়া যায়? দয়ামায়া নেই, সে আবার কিসের
সভ্য? - যেন কষ্ট থেকেই বললো ইশি।
যে মানুষটা ইট মেরে আমার পা ভেঙে দিছিলো, তারে পাইলে প্রতিশোধ নেবো
না, শুধু একটাবার জিজ্ঞেস করবো যে স্যার, আমি আপনার কি ক্ষতিটা করেছিলাম যে আপনি
আমারে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু বানাই দিলেন? আমি ঠিক মত হাটতে পারি না, বন্ধুদের
সাথে দৌঁড়াতে পারি না, তিন পায়ে হাটতে খুব কষ্ট হয় আমার। আমি দোষ করে থাকলেও এমন
শাস্তি দিবেন! আর আমি তো কোনো দোষ করিনি। তাহলে এমনটা কেন করলেন আমার সাথে। - এসব
বলেই কেঁদে উঠলো গুলু। ওর চোখ দুটো ভেজা। গুলুর মধ্যে যে এত কষ্ট তা কখনো বোঝা
যায়নি। বন্ধু মহলে গুলু খুব হাসি খুশি থাকে সবসময়। তবে আজ যেন নিজেকে সামলে
রাখতে পারলো না আর। মানুষের প্রতি ওর যে খুব অভিমান। তাই ই যেন প্রকাশ পাচ্ছে ওর
চোখে মুখে।
মানুষকে গালি দিয়েই বা করবি কি? রাগ করে গালি দিয়ে মানুষের গা
ঘেঁষে চলা তো আর বন্ধ করতে পারবো না। দিনশেষে ওদের দয়াতেই তো বেঁচে আছি। সবাই
হয়তো লাথি দেয়, গালি দেয়। তবে দিনশেষে দু-একজন খাবার দেয়। তাই খেয়েই তো বেঁচে
আছি। মানুষের মতো যদি আমাদের ইনকাম থাকতো, মানুষরে গুণাই ধরতাম না। সবগুলারে
কামড়ে দ্বীপ থেকে বের করে দিতাম। এই দ্বীপ হতো আমাদের। কিন্তু মানুষের মত অন্যের
জিনিস কেড়ে খাওয়ার স্বভাব তো আমাদের নেই। - বললো টুকি।
মানুষকে গালি দেওয়া শেষ হয়েছে? শেষ হলে চল এবার জেটিঘাটের দিকে
যাই। জাহাজ আসার তো সময় হয়ে আসলো। গিয়ে দেখি খাওয়ার কোনো ধান্দা করতে পারি
কিনা। দেরি হলে কিছুই পাবো না। ইশি সবাইকে জাহাজের কথা মনে করিয়ে দিলো।
ঝাউ পাড়ের তিপ্রি আর ওর সার্কেল কালকে মেলা খাবার পেয়েছে দেখলাম।
নিজেরা খেয়ে শেষ করতে পারছে না। বড়লোক একটা গ্রুপ আসছিল, ওদের থেকে কেমনে জানি
বিরানীর নিয়েছে। যদিও পচা, তবে আমাদের কাছে পচা আর ভালো কি? আমাদের কাছে বিরানী তো
বিরানী ই। আর মানুষ আমাদের ভালো বিরানী দিবে! মানুষ তো এতটাও দয়ালু না। দুঃখের
কথা আর কি বলবো। খুব লোভ লাগছিল। তবে ওর সাথে তো কথা বলি না। তাই ভাব জমাইতে পারি
নাই। - স্মৃতিচারণ করে কষ্ট পাচ্ছে টুকি।
তিপ্রির বোনের পেছনে একসময় লাইন মারতিস? সব জেনেও সে তোরে বিরানী
খাইতে ডাকবে এইটা ভাবলি কি করে? - খোঁচা মেরে মজা নিলো ইশি।
দেখ, এসব পুরানো কথা টেনে আমারে ইমোশনাল করবি না। বিরানীর শোক ই
সামলাতে পারছি না। আর তুই কি সব পুরানো কথাটা টানছিস? - ইশিকে থামিয়ে দিল টুকি।
কতদিন যে বিরানী খাইনি ঠিক মনে পড়ে না। - গুলুও যেন বিরানীর শোকে
কাতর হয়ে গেলো।
খাবি কেমনে? জিনিসপত্রের দাম, মানুষ তো ঠিকঠাক ভাতই খায় না। -
বললো তাহি।
তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। আগে খাবার পচে গেলে ফালায় দিতো সেসব খাইতে
পারতাম। এখন ফেলায় দেয়ার কোনো নাম গন্ধই নেই। - যোগ করলো ইকি।
মানুষের ভিতরে ভালো একটা পরিবর্তন এসেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে
মানুষ এখন আর অপচয় করে না। - বললো টুকি।
মানুষের এই ভালো দিক আমাদের জন্য যে কত বড় খারাপ দিক তা হাড়ে
হাড়ে বুঝতেছি। ওরা খাবার অপচয় না করলে আমরা কি খাবো? - বললো তাহি।
আচ্ছা বাদ দে। যা গল্প আছে জেটিঘাটে গিয়ে করিস। আগে চল ঐ দিকে
যাই। - আবারো সবাইকে জেটিঘাটের দিকে যেতে তাড়া করলো ইশি।
জাহাজ আসার সময় হয়ে গেছে। সবাই মিলে সমুদ্রের পাড় ধরে রওনা হলো
জেটিঘাটের দিকে। যারা থাকবে তাদের অনেকেই সমুদ্রপাড়ে হাটাহাটি করছে, দল বেঁধে
গোসল করছে, হাত ধরে পা ভিজিয়ে প্রেম করছে। ওরা পাঁচ বন্ধু ওদের মত গল্প করতে করতে
দ্বীপের উত্তর-পূর্ব পাশ দিয়ে জেটিঘাটের দিকে যাচ্ছে। দ্বীপের এই উত্তর-পূর্ব
পাশটা সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গা। এখানে গোসল করা, সাঁতার কাটা তো দূরের কথা, এই
উত্তর-পূর্ব বীচে পানিতে নামাও নিষেধ। বছরের বিভিন্ন সময় এখানে অনেক মানুষ মারা
গেছে। এই জায়গাটাকে মানুষ মৃত্যুকূপ বলে। এই জায়গাতে আছে সমুদ্রের উল্টো স্রোত।
শিক্ষিত মানুষেরা এটাকে রিপ কারেন্টও বলে। এটা এক ধরনের ঢেউ যা সমুদ্রের নিচে
ধাক্কা খেয়ে উল্টো দিকে, মানে গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যায়। সমুদ্র থেকে ৯০ ডিগ্রী
অ্যাঙ্গেলে দুই দিক থেকে আসা এই ঢেউ প্রথমে সমুদ্র সৈকতে ধাক্কা খায়। তারপর সরু
একটা পথ ধরে আবারো সমুদ্রে ফিরে যাই। যদি কেউ এই সরু পথের মধ্যে পড়ে তাহলে তার
বেঁচে ফিরে আসা দুষ্কর। এজন্য এটাকে মানুষ মৃত্যুকূপ বলে। এটা যে কোন সমুদ্র সৈকতে
হতে পারে। এর মৃত্যু কূপ চেনার উপায় হল উপর থেকে দেখতে সমুদ্রকে গাঢ় নীল আর খুব
শান্ত মনে হবে। না বুঝে এই শান্ত আর গাঢ় নীলের প্রেমে পড়লেই জীবন ঘন্টা বেজে
যাবে। ওরা পাঁচ বন্ধু ভুলেও এখানে নামে না। যদি কোনো মানুষকে নামতে দেখে তাহলে
ওদের ভাষাতে ভয় দেখিয়েই এই উত্তর-পূর্বকোণ থেকে দৌঁড়ানী দেয়। মানুষ হয়তো
তাদেরকে গালি দেয়। কিন্তু এই মানুষ জানেও না তারা যাদের গালি দিচ্ছে তারা ই
মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। মানুষ স্বাভাবতই অকৃতজ্ঞ। এটা ওরা পাঁচবন্ধু বিশ্বাস
করে। তাই মানুষের থেকে ওদের কিছু চাওয়ার নেই।
জেটিঘাটে মানুষের প্রচন্ড ভিড়। যদিও এটা এখানকার প্রতিদিনকার
ঘটনা। ঘুরতে এসে যে মানুষটা এখান থেকে চলে যায় তার কাছে হয়তো সেটা একদিনের ঘটনা।
তবে এমন ঘটনা প্রতিদিন দেখতে দেখতে ওরা বন্ধুরা সব কিছু মুখস্ত করে ফেলেছে। এ যেমন
জাহাজে খাবে বলে হাই হুতাশ করে বেশি টাকা দিয়ে খাবার কেনা, কিংবা কার আগে কে যাবে
তাই নিয়ে ঠেলাঠেলি। যেন জাহাজ ওকে রেখেই চলে যাবে। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা মানুষের
একটা অভ্যাস। কে কার আগে যাবে সেই চিন্তা। ছাড় দেয়ার কোন মানসিকতা নেই মানুষের
মধ্যে। এই হাজার হাজার মানুষ দ্বীপটা ধ্বংস করে, নোংরা করে শহরে চলে যাবে।
প্রতিদিনের এই আট-দশ হাজার মানুষ যদি অনিচ্ছাতেও একটা করে খাবারের প্যাকেট ফেলে
যায়, তাহলে সমুদ্র পাড়ে প্রতিদিন আট-দশ হাজার খাবারের প্যাকেট জমে। এই কথিত সভ্য
মানুষ গুলো শহরে গিয়ে ঠিকই বলবে এই দ্বীপে ঘোরার কোন পরিবেশ নেই, এই দ্বীপ
অপরিষ্কার।
সভ্য মানুষেরা
নিত্যব্যবহার্য প্লাস্টিকের অধিকাংশ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়, যা জলজ প্রাণী,
খাদ্য চেইন, এবং মানবজগতের জন্য এক বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ খাল, নালা,
পুকুর, নদী হয়ে পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হলো সমুদ্র। প্লাস্টিক
ব্যাগ মাটিতে মিশতে সময় লাগে প্রায় ২০ বছর। চা, কফি, জুস, কোমল পানীয়ের প্লাস্টিক
কাপের ক্ষেত্রে সময় লাগে ৫০ বছর। অন্যদিকে ডায়াপার ও প্লাস্টিক বোতল অপচন অবস্থায়
প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে প্রায় ৪৫০ বছর। সমুদ্র যেন প্লাস্টিক বর্জ্যের এক বিশাল
মজুদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এতে করে বিপর্যস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক জীবন। প্রতি বছর ৮
মিলিয়নেরও বেশি মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে প্রবেশ করে। এই প্লাস্টিক
দূষণ সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য বিশাল হুমকির রূপ নেয়, কেন না তারা প্রায়ই ভুল করে
প্লাস্টিককে খাবার মনে করে বা বিভিন্নভাবে তাদের শরীর প্লাস্টিকের সঙ্গে জড়িয়ে
যায়। এসব সামুদ্রিক প্রাণীদের পাকস্থলিতে প্লাস্টিক পৌঁছে শরীরের সাথে মিশে যায়।
তারমানে মানুষ দ্বীপে ফুর্তি করে এসে মজা করে টাকা দিয়ে শুধু যে সামুদ্রিক মাছ,
কাকড়া খায় তা নয়। সাথে প্লাস্টিকও খাচ্ছে।
প্লাস্টিক বর্জ্যের ফলে
মাটি দূষিত হয় এবং এতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে জীবজগত ও উদ্ভিদকূল
উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে,
কৃষি উৎপাদনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়। মানুষ নিজের ভুলের জন্যই একসময় না খেয়ে মরবে।
প্লাস্টিক বর্জ্য পুড়িয়ে
ফেলার ফলে পরিবেশে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ মিশে যায়, যার ফলে বায়ু দূষণ ঘটে এবং
পরবর্তীতে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগব্যাধির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। প্লাস্টিক দূষণের
সবচেয়ে ভয়ের দিকটি হচ্ছে এর দীর্ঘস্থায়িতা। প্লাস্টিকের পচনে বহু বহু বছর কেটে যায়
এবং বহু বছর পরও এটি ভেঙে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক নামের ক্ষুদ্রাংশে পরিণত হয়।
মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকার ৫ মিলিমিটারের চেয়েও কম এবং সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে
যে বাতাসে প্রাণীরা শ্বাস নেয়, তার সবখানেই এখন মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
রয়েছে। এই ছোট ছোট কণাগুলো খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে প্রাণী দেহে প্রবেশ করে এবং
বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দেয়।
ওরা পাঁচ বন্ধু কিছু মানুষকে টার্গেট করলো খাবারের জন্য। ওরা অবশ্য
কয়েকটা জিনিস দেখে মানুষকে টার্গেট করে। এই যেমন যার হাতে খাবারের প্যাকেট আছে,
যে মানুষটার চেহারা একটু আলাভোলা টাইপের। বিশেষ করে মেয়ে মানুষ। ছেলেদের থেকে
মেয়ে মানুষদের মন বেশি নরম হয়। তাদেরকে সহজে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা যায়।
তাদের গা ঘেষে চললে ইমোশনে পড়ে অথবা ভয়ে মাঝে মাঝে খাবার দেয়। পুরুষ মানুষেরা
লাথি মারে। তখন ওদের মনে চায় মানুষের পায়ে কামড় দিতে। তবে নিজেদের সংযত করে।
একটা প্রবাদ আছে না - মানুষের কাজ মানুষ করেছে লাথি দিয়েছে গায়ে, তাই বলে কি আর
কামড় দেওয়া উচিত হবে মানুষের পায়ে।
আজকে ওদের প্লান সফল হলো। বয়স্ক দুজন মহিলা মানুষের থেকে খাবার
নিতে পেরেছে। কেক আর পাউরুটি। মহিলা মানুষ দুজন খাচ্ছিল। তাহি আর ইকি তাদের দিকে
জিব বের করে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। উনাদের দয়া হলো। ব্যাচ, কেক আর পাউরুটি
নিয়ে ওরা পাঁচ বন্ধু ভাগ করে খেয়ে আবারো খাবারের ধান্দায় নেমে পড়লো। জাহাজ ঘাটে
ভিড়তে শুরু করেছে। বড় বড় কিছু ট্রলারও এসেছে। লোকালয় থেকে এই দ্বীপে আসা যাওয়ার
মাধ্যম হলো এই বড় বড় জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। এই জাহাজ ও ট্রলারগুলো তেল ও
বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রে ফেলছে, যা সমুদ্রের পরিবেশ নষ্টে সবচে বেশি দায়ী। একইভাবে
এখানে ঘুরতে আসা মানুষ আর এই দ্বীপে যে মানুষগুলো থাকে তারা তাদের ব্যবহৃত পণ্যের
উচ্ছিষ্ট অংশ তথা অপচনশীল প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিস ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে
সমুদ্রের পানিতে ফেলে পরিবেশকে দূষিত করছে। মানুষ ই মানুষের বদনাম করে, ছোট করে।
এই দ্বীপ যে নোংরা হয়েছে সেটা সত্যি। এই দ্বীপে থাকা মানুষেরা অভিযোগ করে এখানে
ঘুরতে আসা মানুষগুলো দ্বীপটাকে নোংরা করছে। আর ঘুরতে আসা মানুষজন বলে তারা এখানে
এসেই নোংরা একটা দ্বীপ পেয়েছে। তবে এখানে অবস্থান করা কিংবা ঘুরতে আসা এই দুই
পক্ষই যে মানুষ এবং দোষ যে এই মানুষেরই এই দায়ভার এই দুই পক্ষ ভাগাভাগি করে নিতে
রাজি না। একজন আরেকজনের উপর দোষ চাপাতেই ব্যস্ত। তবে এই দ্বীপের একটি সুন্দর কিছু
হলেই সেটার কৃতিত্ব দুই পক্ষ ই চায়। দ্বীপে যে এত আবর্জনা সেটা তো মানুষ বাদে অন্য
প্রাণী এসে ফেলেনি। এই দ্বীপের স্থানীয় মানুষ, ব্যবসায়ী মানুষ সবার অভিযোগ যারা
এখানে ঘুরতে আসে তারা সমুদ্র পাড়ে ময়লা আবর্জনা ফেলে দ্বীপের স্বাভাবিক পরিবেশ
নষ্ট করছে। আর ঘুরতে আসা মানুষগুলো সব দোষ দেয় এখানকার মানুষদেরকে। এমন ঘটনা
লোকালয়ে আরেকটা জায়গাতে হয়। কোন থানার সীমান্ত এলাকায় খুন হলে দুই থানা ই বলে
এটা তাদের এলাকা না। তবে সেই একই জায়গাতে মাদকের চোরাচালান হলে দুই থানা ই নিজের
এলাকা দাবি করে মাদক উদ্ধারে হাজির হয়। প্রবাল হচ্ছে এই দ্বীপের প্রাণ। তবে
প্লাস্টিক আর তেল পানিয়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই দূষণের
কারণে প্রবালের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ঘুরতে আসা মানুষদের প্রবাল সংগ্রহের কারণে
দূষিত হচ্ছে সৈকতের পরিবেশ। পাথরের ওপর ঘোরাঘুরি ও গোসলের কারণে প্রবালের
বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো সামুদ্রিক শৈবাল উপড়ে ফেলা
হচ্ছে, কচ্ছপগুলো ডিম পাড়ার জন্য সৈকতে আসছে না। সমুদ্র পড়ের অবৈধভাবে তৈরী হওয়া
হোটেলগুলোর আলোকসজ্জার প্রভাব পড়ছে সমুদ্রপাড়ে। এই আলোকসজ্জার জন্য কচ্ছপ ডিম পাড়ার
জন্য পাড়ে আসতে ভয় পায়। নিয়মিত বিরতিতে কচ্ছপকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে।
.png)


No comments