Header Ads

গালি দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ || শাহরিয়ার সোহাগ

 

গালি দেওয়া ও অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা— কোনো মুমিনের মানুষের কাজ হতে পারে না। ভদ্র ও সভ্য মানুষরা ক্রোধে অগ্নিশর্মা হলেও মার্জিত শব্দ ব্যবহার করেন। প্রয়োজনে সংযতভাবে শোকজ করেন। তবুও কাউকে আশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণ করেন না।

বিপরীতে কিছু মানুষ রাগের অতিশয্যে হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অশ্লীল ও শ্রুতিকটূ বাক্যবাণে অন্যকে নাজেহাল করে। গাল-মন্দ করে সম্মান নষ্ট করে। এতে সে পাশবিক ও অমানবিক আনন্দানুভব করে।


গালি দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম

বৈধ কিংবা অবৈধ— যেকোনো কারণেই হোক, কাউকে গালি দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। এমনকি হাসি-কৌতুক ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অশোভনীয় ও নিন্দনীয়।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৮)


গালি দেওয়া মুনাফিকের অভ্যাস

চারটি অভ্যাস যদি কারও ভেতর থাকে, হাদিসে তাকে মুনাফিক বলা হয়েছে। এমনকি এগুলোর কোনো একটি পাওয়া গেলেও সে মুনাফিক হিসেবে পরিগণিত হবে। হাদিসের আলোকে সেগুলো হলো, ‘যখন তাকে বিশ্বাস করা হয়, সে বিশ্বাস ভঙ্গ করে। কথা বললে, মিথ্যা বলে। অঙ্গিকার করলে ভঙ্গ করে এবং বিবাদ-বিতর্কে উপনীত হলে অন্যায় পথ অবলম্বন করে। (বুখারি, হাদিস : ৩৪; মুসলিম, হাদিস : ১০৬)

আরেক হাদিসে আছে, ‘মুমিন ব্যক্তি কারো সম্মানে আঘাত করে না। কাউকে অভিশাপ দেয় না। অশ্লীল কাজ করে না। মন্দ কথা বলে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১০৫)

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৫, ৭০৭৬; তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৩)

রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘পরষ্পর গাল-মন্দকারী উভয়ে দুইটি শয়তান। তারা পরষ্পরের নিন্দা করে এবং মিথ্যা কথা বলে।’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস : ১৬৮৩৬)


২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গালি-গালাজ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ

ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি তোমাকে তোমার সে বিষয় নিয়ে গালি দেয়— যা সে জানে, তখন তুমি সেই ব্যক্তিকে সেই বিষয় ধরে গালি দিয়ো না— যা ওর মধ্যে আছে আর তুমি তা জানো। এতে তোমার পুণ্য লাভ হবে এবং ওর ওপর হবে পাপের বোঝা। (সহিহুল জামে, হাদিস : ৫৯৪)

জাবের বিন সুলাইম হুজাইমি (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘...যদি কোনো ব্যক্তি তোমাকে গালি দেয় এবং যে ত্রুটি তোমার মধ্যে নেই— তা নিয়ে তোমাকে লজ্জা দেয়, তাহলে তুমি তাকে সেই ত্রুটি নিয়ে ওকে লজ্জা দিয়ো না, যা ওর মধ্যে আছে। ওকে উপেক্ষা করে চল। ওর পাপ ওর উপর এবং তোমার পুণ্য তোমার জন্য। আর অবশ্যই কাউকে গালি দিয়ো না। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫২১, ত্বায়ালিসি : ১২০৮, সহিহুল জামে, হাদিস : ৯৮)


২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গালি দেওয়া কবিরা গুনাহ

অন্য এক হাদিসে আছে, ‘কবিরা গুনাহগুলোর একটি হলো নিজের বাবা-মা’কে অভিশাপ করা।’ জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল! মানুষ নিজের বাবা-মাকে কীভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ‘যখন সে অন্যের বাবাকে গালি-গালাজ করে, তখন সে নিজের বাবাকেও গালি-গালাজ করে থাকে। আর সে অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সে তার মাকেও গালি দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭৩; তিরমিজি, হাদিস : ১৯০২)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্য আচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৫, ৭০৭৬; তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৩)।

তিনি আরও বলেছেন, ‘কাউকে গালি দেবে না এবং ভাল কাজে কার্পণ্য করবে না— যদিও তা কারো সাথে হাসিমুখে সাক্ষাতের বিষয় হয়।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২১১৭৮)


গালির বদলে গালি দেওয়াও নিষেধ

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার (কোনো মুসলিম) ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করেছে অথবা কোনো বিষয়ে জুলুম করেছে, সে যেন আজই (দুনিয়াতে) তার কাছে (ক্ষমা চেয়ে) হালাল করে নেয়— ওইদিন আসার আগে, যেদিন দিনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না। তার যদি কোনো নেক আমল থাকে, তবে তার জুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার কোনো নেকি না থেকে, তবে তার সঙ্গীর পাপরাশি তার (জালেমের) ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯, ৬৫৩৪; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৯৩৩২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের মার্জিত ভাষা ও শ্রুতিমধুর শব্দ ব্যবহারের তাওফিক দান করুন। গালমন্দ ও অশ্লীল বাক-বিনিময় থেকে রক্ষা করুন। আমিন।


No comments

Powered by Blogger.