Header Ads

স্বদেশেও ভাল নেই মোদী, ফের জ্বলছে মণিপুর || শাহরিয়ার সোহাগ

স্বদেশেও ভাল নেই মোদী, ফের জ্বলছে মণিপুর, shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, রাজনীতি, বিশ্লেষণ, বাংলাদেশ, বাংলা বসন্ত, সোহাগ এর লেখালেখি, rajniti, dhaka

কাশ্মীরের উত্তাপের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের অশান্ত ভারতের আরেক সীমান্তবর্তী রাজ্য মণিপুর। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যে ফের দেখা দিয়েছে তীব্র উত্তেজনা ও সহিংসতা। সর্বশেষ, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী চান্দেল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ গেছে অন্তত ১০ জনের, যাদের সবাইকে উগ্রপন্থী বলছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসাম রাইফেলসের একটি দল বিশেষ অভিযান চালাতে গেলে, সন্দেহভাজনরা সেনা উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। জবাবে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ১০ অস্ত্রধারী। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি সেনাবাহিনীর।

তবে নিহতদের পরিচয় বা তারা কোন গোষ্ঠীর সদস্য— সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, মণিপুরের চান্দেল জেলাটি মূলত কুকি, জো, নাগা ও অন্যান্য পাহাড়ি আদিবাসীদের আবাসভূমি। বিগত দুই বছর ধরে চলমান জাতিগত দ্বন্দ্বে রাজ্যজুড়ে সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

মণিপুরের সংকট আদতে নতুন কিছু নয়। ১৯৪৯ সালে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই রাজ্যটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সহিংসতা এবং প্রান্তিকীকরণের রাজনীতি একটি স্থায়ী রূপ নিয়েছে। নানা জাতিগোষ্ঠীর এই রাজ্যটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হলেও বাস্তবতা সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

২০২৩ সালে শুরু হওয়া সর্বশেষ সহিংসতা মূলত মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত অধিকার ও স্বীকৃতিকে ঘিরে। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেইরা মণিপুরের সমতলভূমিতে বসবাস করে, আর পাহাড়ি অঞ্চলে বাস কুকি ও নাগা সহ প্রায় ৩৩টি উপজাতির, যাদের বেশিরভাগই খ্রিস্টান।

দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে মরিয়া মেইতেইদের পক্ষে ২০২৩ সালে মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দেয় সিডিউলড ট্রাইব তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করার। এর তীব্র বিরোধিতা করে কুকি ও অন্যান্য পাহাড়ি সম্প্রদায়। তারা দাবি করে, কেবল হিন্দু নয় বলেই রাষ্ট্রের অবহেলায় থেকে যাচ্ছে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

এই বিরোধ থেকেই শুরু হয় উন্মুক্ত সশস্ত্র সংঘর্ষ। কুকি ও অন্যান্য পাহাড়ি গোষ্ঠীর সদস্যরা মেইতেইদের বিরুদ্ধে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। সংঘর্ষে ব্যবহার হয়েছে রকেট, মিসাইল এমনকি ড্রোন। বহু ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সাথেও হয়েছে সরাসরি লড়াই।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে চলমান জাতিগত এই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৫০ জন। বাস্তুচ্যুত হয়েছে আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষ।

দেশজুড়ে নির্বাচন চললেও মণিপুরে থেমে নেই রক্তপাত। আর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি নতুন করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে মোদী সরকারকে— স্বদেশেও কি তবে অশান্তির আগুনে ঘিরে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী?

No comments

Powered by Blogger.