Header Ads

আলকাট্রাজ : বিশ্বের সবচেয়ে ‘ভয়ংকর’ কারাগার || শাহরিয়ার সোহাগ

আলকাট্রাজ, বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর কারাগার, shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, রাজনীতি, বিশ্লেষণ, বাংলাদেশ, বাংলা বসন্ত, সোহাগ এর লেখালেখি, rajniti,

একসময় আমেরিকান কারাগারের প্রতীক হিসেবে পরিচিত সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরের ‘আলকাট্রাজ দ্বীপ’ এখন ইতিহাস, রহস্য ও পর্যটনের এক বিস্ময়কর কেন্দ্র।

সেনাবাহিনীর দুর্গ, ফেডারেল কারাগার, জনপ্রিয় লোককাহিনি আর কঠোর নিরাপত্তার কারাগার হিসেবে আলকাট্রাজ আজ ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

১৭৭৫ সালে স্প্যানিশ অভিযাত্রী ‘জুয়ান ম্যানুয়েল দে আয়ালা’ দ্বীপটি আবিষ্কার করেন এবং এর নাম দেন ‘লা ইসলা দে লস আলকাট্রেসেস’, অর্থাৎ ‘পেলিকানদের দ্বীপ’। এটি ছিল এক পাথুরে, নির্জন স্থান, যেখানে কোনো গাছপালা বা মানুষ বাস করত না, শুধু পাখিদের আনাগোনা।

পরবর্তী সময় ১৮৫০ সালে রাষ্ট্রপতি ‘মিলার্ড ফিলমোর’ আলকাট্রাজ দ্বীপকে সামরিক উদ্দেশ্যে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। সিয়েরা নেভাদায় সোনার আবিষ্কারে সান ফ্রান্সিসকোতে জনসংখ্যা ও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটে, যা অঞ্চলটিকে সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তায় ফেলেছিল।

মার্কিন সেনাবাহিনী এখানে ‘১০০-এর বেশি কামান’ স্থাপন করে এবং দ্বীপটি হয়ে ওঠে পশ্চিম উপকূলের সবচেয়ে সশস্ত্র দুর্গ। পশ্চিম উপকূলের প্রথম বাতিঘরও এখানে স্থাপন করা হয়।

যদিও ফোর্ট আলকাট্রাজ কখনো যুদ্ধে অংশ নেয়নি, গৃহযুদ্ধের সময় এটি বন্দিদের রাখার জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৮৬০-এর দশকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ধৃত বেসামরিক নাগরিকদের এখানে রাখা হতো। এ সময়ে অতিরিক্ত আবাসন স্থাপন করে প্রায় ‘৫০০ বন্দির ধারণক্ষমতা’ তৈরি করা হয়।

১৯০৬ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর আলকাট্রাজে অন্য কারাগার থেকে বন্দি স্থানান্তর করা হয়। বন্দিরা নিজেরাই একটি নতুন কারাগার নির্মাণ করে, যার নাম হয় ‘প্যাসিফিক শাখা, মার্কিন সামরিক কারাগার, আলকাট্রাজ দ্বীপ’।

এ সময়ে এটি ছিল তুলনামূলকভাবে নরম এক প্রতিষ্ঠান। এখানে বন্দিরা কাজ করত, পড়াশোনা করত, এমনকি  কারা কর্মকর্তাদের সন্তানদের বেবিসিটার হিসেবেও কাজ করত।

এ ছাড়া খেলার জন্য- বেসবল মাঠ, বক্সিং ম্যাচ, উদ্যানচর্চা— সবকিছুই তাদের জীবনযাপনের অংশ ছিল।

১৯৩৪ সালে  ‘ফেডারেল ব্যুরো অফ প্রিজনস’ আলকাট্রাজকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং এটি হয়ে ওঠে আমেরিকার প্রথম সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেসামরিক কারাগার। এর নির্মাণ পরিকল্পনা ছিল এমন যে, ‘যেসব বন্দি অন্য কোথাও সামলানো যাচ্ছিল না’, তাদেরই এখানে আনা হতো।

মহামন্দা আধুনিক আমেরিকান ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাক্ষী ছিল এবং আলকাট্রাজের তীব্রতা তার সময়ের সঙ্গে বেশ মানানসই ছিল।

আলকাট্রাজ ছিল কুখ্যাত অপরাধীদের আবাসস্থল, যার মধ্যে রয়েছে- আল স্কারফেস, ক্যাপোন , যিনি কর ফাঁকির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এবং দ্বীপে পাঁচ বছর কাটিয়েছিলেন। এফবিআইয়ের প্রথম জনসাধারণের শত্রু, অ্যালভিন ক্রিপি, কার্পিস, ২৮ বছর ধরে আলকাট্রাজের বাসিন্দা ছিলেন।

সবচেয়ে বিখ্যাত বন্দি ছিলেন আলাস্কার খুনি রবার্ট ‘বার্ডম্যান’ স্ট্রাউড, যিনি আলকাট্রাজে ১৭ বছর কাটিয়েছিলেন। এর ২৯ বছরের কার্যক্রমে, ফেডারেল কারাগারে ১  হাজার ৫০০ জনেরও বেশি আসামিকে রাখা হয়েছিল।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

এ কারাগারে বন্দিদের মাত্র চারটি অধিকার ছিল- চিকিৎসা, খাদ্য, আশ্রয় ও পোশাক। বিনোদন ও সাক্ষাৎ ছিল অর্জনযোগ্য সুবিধা।


আলকাট্রাজের অবসান

আলকাট্রাজের প্রধান সমস্যা ছিল এর অবস্থানগত ব্যয়বহুলতা। দ্বীপে কোনো বিশুদ্ধ পানির উৎস ছিল না, প্রতি সপ্তাহে ১০ মিলিয়ন গ্যালন পানি নৌকায় করে আনতে হতো। ১৯৬৩ সালে এই ব্যয় অকার্যকর মনে করে কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এর সমতুল্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কারাগার হলো কলোরাডোর ফ্লোরেন্স। একে ডাকা হয় ‘আলকাট্রাজ অফ দ্য রকিজ’।

১৯৭২ সালে আলকাট্রাজকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৭৩ সালে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এখন এটি প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী ভ্রমণ করে থাকেন।

উল্লেখ, গত রোববার (৩ মে) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্মম ও সহিংস অপরাধীদের রাখার জন্য কুখ্যাত আলকাট্রাজ কারাগারকে ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনসকে পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.