Header Ads

ভারতীয় আগ্রাসন, আধিপত্যবাদ এবং বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা || শাহরিয়ার সোহাগ

 

ভারতীয় আগ্রাসন, আধিপত্যবাদ এবং বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic bangla poem, bangla poem for love, small bangla

‘ভারত আমাদের শত্রু-এ কথা যে প্রজন্ম বুঝতে পারবে, তারাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।’ এই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ সমাজ জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বা আগ্রাসনের থাবা পড়েনি। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলেও রক্ষা পায়নি ভারতীয় আগ্রাসন থেকে। স্বাধীনতা অর্জনে ভারত সহযোগিতা করলেও স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় সব সময়ই আমাদের দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে আধিপত্যবাদী মনোভাব প্রদর্শন করে এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। দেশটির এই আচরণ বাংলাদেশের জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনেনি, বরং তাদের আগ্রাসনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

পানি আগ্রাসন : নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যমতে, ছোট-বড় মিলে বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এক হাজার আটটি। এর মধ্যে ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদীও অন্তর্ভুক্ত। এ দেশে নদীর পানির প্রধান উৎস আন্তর্জাতিক নদ-নদীগুলো। এসব নদী উজান থেকে পানি বয়ে আনে এবং বাংলাদেশ হয়ে সাগরে পতিত হয়। অভ্যন্তরীণ নদীগুলো বৃষ্টি ছাড়া আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানিপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের পানি আগ্রাসনের কারণে কয়েক শ নদ-নদী ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। বাকিগুলোর মধ্যেও অধিকাংশ মরে যাওয়ার পথে।

সাংস্কৃতিক প্রভাব ও মিডিয়া আধিপত্য : বর্তমানে বাংলাদেশে ৬০টিরও বেশি বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ভারতীয়। অথচ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর ওপর এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে ভারত। অন্যদিকে আমাদের দেশের বাড়ছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় ভারতীয় সিরিয়াল প্রচার। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের অন্যতম উৎস কার্টুনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মূলে রয়েছে ভারতীয় চ্যানেলগুলো। যার ফলে শিশু, কিশোরসহ সব বয়সি মানুষের ওপর পড়ছে ভারতীয় সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাব। অতিসহজেই ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো আমাদের দেশে চালাচ্ছে দানবীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। প্রচারিত খোলামেলা সংস্কৃতি আমাদের সমাজ ও সামাজিক মানুষের জীবনবোধের সঙ্গে বেমানান। ভারতীয়দের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে আমাদের সমাজের জনগণ বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে নৈতিক অবনতি চরম রূপ ধারণ করেছে এবং তা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এ দেশের ধর্মপ্রাণ অধিকাংশ মানুষ।

সীমান্ত হত্যাকাণ্ড : যে দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত নয়, সে দেশও সুরক্ষিত নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ সীমান্তজুড়ে (প্রায় ৪০৯৬ কিলোমিটার) রয়েছে ভারত। সীমান্তে ভারতের আগ্রাসী মনোভাব চোখে পড়ার মতো। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিএসএফের হাতে হত্যার স্বীকার হয়েছে ৩০ জন। এর মধ্যে গুলি করে মারা হয়েছে ২৫ জনকে। ২০২৩ সালে ২৮ জন, যার মধ্যে ২৪ জনকে মারা হয়েছে গুলি করে। সংগঠনটি আরো জানায়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এসময় বিএসএফ সদস্যদের হাতে আহত হয়েছে ৭৬১ জন। আর ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এই ১০ বছরে বিএসএফের হাতে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী নিয়মিত সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয় বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিকদের হুমকি, অপব্যবহার, নির্বিচারে আটক ও নির্যাতন করে আসছে। বাংলাদেশের সীমান্তে এ দেশের নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, সেই প্রশ্নের কোনো জবাব কখনোই ভারতের দিক থেকে পাওয়া যায়নি।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

নদী ও পানি ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা কঠিন। আর সে কারণেই ভারত যুগ যুগ ধরে পানি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নোংরা রাজনীতি করে আসছে। এর অংশ হিসেবেই দিল্লির শাসকরা শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রেখে বাংলাদেশের চাষাবাদে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। আবার বর্ষা মৌসুমে ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁধের পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে সৃষ্টি করে মানবসৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা। যার ফলে প্রতিবছরই বাস্তুহারা হয় উপকূলীয় ও নদীতীরবর্তী অনেক জনগোষ্ঠী। নষ্ট হয় শত শত হেক্টর জমির ফসল এবং অর্থনীতিতে দেখা দেয় ব্যাপক মন্দা।

এ ছাড়া বাংলাদেশের বড় প্রকল্পে আধিপত্য বিস্তার, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিসহ বিভিন্নভাবে ভারত বাংলাদেশের প্রতি তার আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে আসছে। ভারত সব সময় চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের সব সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজের স্বার্থ হাসিল করার। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার গত প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে ভারত এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। ভারতের স্বার্থের অনুকূল বিভিন্ন চুক্তিও সম্পাদন করতে পেরেছে তারা। যার বেশিরভাগ চুক্তিই বাংলাদেশের জন্য চরম ক্ষতিকর।

৫ আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুরু করেছে নতুন যাত্রা। সবকিছু সাজানো হচ্ছে নতুনভাবে। হঠাৎ সরকার পরিবর্তনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ভারত ও তাদের সুবিধাভোগী মহলগুলো। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ভারত বাংলাদেশের কোনো ক্ষেত্রেই আর আগের মতো সুবিধা করতে পারছে না। ভবিষ্যতে  ভারতের প্রতি আমাদের অবস্থান কেমন হবে, তা নিয়ে নানা মহলে উঠছে নানা প্রশ্ন। মওলানা ভাসানীর আরেকটি বিখ্যাত উক্তি ছিল-‘পিন্ডির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়’।

আরও পড়ুন মিয়ানমারকে ঘিরে আসলেই কি কোনো 'প্রক্সি ওয়ার' চলছে ?

স্বাধীনতার পর থেকে ভারত কখনোই যে আমাদের বন্ধু ছিল না, তা আমাদের বোঝার বাকি থাকার কথা না। তাই ভারতের বহুমাত্রিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবারই আওয়াজ তোলা প্রয়োজন। ভারতের আগ্রাসন রুখতে পারলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এই মূলমন্ত্র ধারণ করতে হবে রাষ্ট্র পরিচালকদের। বন্ধুত্ব শব্দের আড়ালে ভারত যে আগ্রাসন এত দিন ধরে চালিয়েছে, সেই সুযোগ আর দেওয়া যাবে না তাদের। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন, তাদেরও এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.