Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৮

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৮

সকাল থেকেই আকাশটা ভারী হয়ে ছিল। আর বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। এখন বৃষ্টির কোনো টাইমটেবল নেই। সবকিছু নিয়ম মেনে চললেও এই বৃষ্টিটা প্রচন্ড ঘাড়তেড়া। তা না হলে বর্ষাকালে কোনো সাড়া শব্দ না দিয়ে এই শরৎকালে হুটহাট এভাবে আসে? এই আকাশ পরিষ্কার তো এই পিচের উপর ডিম পোচ করে খাওয়া রোদের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি। আকাশ যেন তার কষ্ট গুলো জমিয়ে রেখেছিল অনেকদিন ধরেই। তার বুকের হাহাকার থামেছেই না। সাফায়েতের পছন্দ হল সেপ্টেম্বর মাসের মেঘলা আকাশ। ইংরেজী সেপ্টেম্বর মাসে বাংলা ভাদ্রমাস থাকে। আকাশটা লালচে থাকে। বৃষ্টি হবে হবে করে হয় না, তবে আকাশটা দারুণ দেখায়। যেন প্রকৃতি সাজিয়ে রেখেছে। তবে এই শহরে বৃষ্টির কোনো জ্ঞানবুদ্ধি নেই। যখন ইচ্ছ হয়, আসে। যখন ইচ্ছে হয় না, আসে না। সে কোনো ধরা বাঁধা নিয়মে চলতে রাজি না।

 

রাস্তার পাশের ড্রেন গুলো পানিতে ভরে গেছে অনেক আগেই। শহর জীবনেও ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছে। তার জন্য মেয়রকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। শহরের জীবনে গ্রাম্য পরিবেশের ছোঁয়া পাওয়া চাট্টিখানি কথা না। কাজ ফেরত মানুষেরা আটকে আছে রাস্তা কিংবা গলির নামমাত্র ছাউনির তলায়। বৃষ্টির পানির সাথে রাস্তার বালুকণা এক হয়ে আলপনা আঁকছে দাঁড়িয়ে থাকা এই মানুষগুলোর পায়ে। স্কুল ফেরত ছোট বাচ্চাটা থর থর করে কাঁপছে। কেউ হাতের ব্যাগটা মাথার উপর ধরে মাথাকে বাঁচাচ্ছে। আবার কেউ নিজে ভিজে ব্যাগকে বাঁচাচ্ছে। মানুষে মানুষে পার্থক্য অনেক, পার্থক্য তাদের প্রয়োজনে। আর যে সব পার্থক্যের ঊর্ধ্বে, যার প্রয়োজন বলতে কিছু নেই, সে হলো এখানকার বশির পাগল। মানুষের জীবনে সফলতার থেকে সার্থকতা বেশি প্রয়োজন। সফলতাতে পূর্ণ সুখ নেই তবে সার্থকতার মাঝে প্রশান্তি লুকিয়ে আছে। এই যে বশির পাগল, থাকার জায়গা নেই, খাওয়ার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই, জীবন নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। তবু বশির পাগল এই বৃষ্টি কি সুন্দর করে নিজের মতো করে উপভোগ করছে। ছাউনীর নিচে দাঁড়িয়ে সাফায়েত আর নবনীতা। আধাঘন্টা পর ওদের বাস। আজ বাড়ি যাবে দুজন একসাথে। অনেকদিন বাড়িতে যায়নি দুজনের কেউ ই। ক্লাস, পরীক্ষা সবকিছু নিয়েই ব্যস্ত সময় কেটেছে। এবার বাড়ির মানুষদের মুখ দেখা দরকার।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত

 টার্মিনালে বাড়িফেরা মানুষের ভীড়। পিঠে পৃথিবী সমান ভারী ব্যাগ নিয়ে মুখে রাজ্যের হাসি এসব মানুষের। অনেকদিন পর প্রিয় মানুষদেরকে খুব কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হবে তাদের। অনেকে প্রিয়জনের জন্য তাদের পছন্দের জিনিস নিয়েছে তাদের খুশি মুখ দেখার আশায়। বাড়ির ছোট বাচ্চাদের জন্য কেউ নিয়েছে চকলেট। পানি, চিপস, হেডফোন, চার্জারেরর মত শ শ জিনিস ফেরী করে বেড়াচ্ছে শ শ ভ্রাম্যমান ফেরিওয়ালা। কেউ কিনছে তো কেউ হাতে নিয়ে দেখে রেখে দিচ্ছে। ভিক্ষুক এসে আল্লাহর রাস্তায় টাকা চাচ্ছে। এবং তার উপস্থাপনাটা এমন যে একমাত্র তাকে টাকা দিলেই আল্লাহর রাস্তায় টাকা দেওয়া হবে। সে ব্যতীত আল্লাহর রাস্তায় টাকা দেওয়ার আর কোন রাস্তা নেই। কেউ দিচ্ছে কেউ দিচ্ছে না। কেউ টাকা না দিয়ে তাকে উল্টো প্রশ্ন করছে। বিনিময়ে ভিক্ষুকের থেকে বিড়বিড় করা গালিও খাচ্ছে। সহজ সরল মানুষকে ভালিয়ে ভুলিয়ে পকেট কাটার মত চালাক মানুষের আনাগোনা বাস টার্মিনাল গুলোতে বেশি হয়। চোখের পলকেই ঘটে যায় কোনো অঘটন। এমনকি চোখ কান অনেকক্ষণ খোলা রাখার পর চোখ কান যখন ক্লান্ত হওয়ার উপক্রম, তখনই চোখ কানের এতক্ষনের পরিশ্রমকে মাটি করে ঘটে যেতে পারে অঘটনটা। এক এক বাসের স্টাফরা বিভিন্ন কথা বলে যাত্রীদের ডাকতে ব্যস্ত। কেউ যাত্রীদের পটিয়ে টিকিট বিক্রি করছে। আর যার পটানোর স্কেল খুব একটা ভালো না সে ব্যর্থ হচ্ছে। দিনশেষে কোনো না কোনো ভাবে সবাই বাড়ি ফিরছে। বাসে খাওয়ার জন্য পানি, চিপস, কিছু শুকনো খাবার আর চকলেট কিনে নিলো সাফায়েত। ঠিক এতগুলো জিনিস কিনলো যে সাথে এক প্যাকেট মিষ্টি কিনলে হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘুরে আসাও সম্ভব হতো। এই মন্তব্যটা অবশ্য নবনীতা করেছে। নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘন্টা পরে ওদের বাস আসলো। ততক্ষণে বৃষ্টিও থেমে গেছে। কাউন্টার থেকে বাসে সুপারভাইজারকে বলে দেওয়া হলো যাত্রীর মাথা গুণে তারপর বাস ছাড়তে। যেন যাত্রী থাকুক আর না থাকুক যাত্রীর মাথাটা থাকলেই হবে।

 

সেবার একসাথে বাড়ি গিয়ে কিছুদিন ঘুরে আবার একসাথে ক্যাম্পাসে ফিরেছিল। এটাই ওদের একসাথে একমাত্র লংজার্নি।

No comments

Powered by Blogger.