শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৩১
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৩১
বছর খানেকের ব্যবধানে সাফায়েতের আরো
একটা বই প্রকাশ পায়। উপন্যাস। তাও আবার নামকরা প্রকাশনার ব্যানারে। কবিতার পর উপন্যাস
লিখে ক্যাম্পাসে যেন একটা সাহিত্যের বাতাস ছড়ালো সাফায়েত। রাতারাতি পূর্বের সব জনপ্রিয়তা
ছাপিয়ে সাফয়েত যেন আরো অনন্য হয়ে উঠেছে। এই বয়সেই সাফায়েতের এই অর্জন যেন তার পরিশ্রমে
খুশি হয়ে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত উপহার। ওর সহপাঠিরা যখন ক্লাসের বই মুখস্ত করতে ব্যস্ত,
তখন সাফায়েত উপন্যাস লিখে রীতিমত জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তার নামডাক ক্যাম্পাসের প্রাচীর
ভেঙে পথে প্রান্তরে ইচ্ছেমত ছুটোছুটি করছে তখন। সাফায়েত হয়তো এই খ্যাতির কথা ভেবে লেখা
শুরু করেনি। এখনো খ্যাতির জন্য লেখেনা সে। নিজের জমানো অভিব্যক্তি গুলো মানুষ পছন্দ
করে স্বেচ্ছায় তার পাঠক হয়। এই ব্যাপারটা অবশ্যই সাফায়েতের জন্য আনন্দের। এতে সে নতুন
লেখার উৎসাহ পায়।
পরিচয় কিংবা প্রেমের শুরুটা হয়েছিল যে লেখালেখির মাধ্যমে, সেই লেখালেখি যেন
তখন দুজনের দূরত্বের কারণ। নবনীতার পরিবারের লেখক ছেলে পছন্দ না। লেখক বলতে রাস্তায়
মদ গাজা খেয়ে পড়ে থাকে, যার কোন কাজ নেই, কোন গতি নেই, সে ই নাকি লেখালেখি করে। লেখালেখি
করা কঠিন কিছু না। এমন দুকলম সবাই লিখতে পারে। তবে এই দুকলম লেখাতে তো আর পেট চলবে
না। নিজের পেট চলানোই তো দুষ্কর, সেখানে বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি? বাচ্চাকাচ্চা
হলে তাদের খরচ, বাচ্চাকাচ্চা বড় হলে তাদের পড়াশোনার খরচ সব সামলাবে কি করে? এর মধ্যে
তৈরি হয় নবনীতার বাড়তি সন্দেহ। অমুক গল্পের নায়িকা চশমা পরে, তমুক গল্পের নায়িকার
কাঁধ অব্দি চুল, অমুক গল্পের নায়িকা শ্যামবর্ণের। এসবের কোনটাই নবনীতার সাথে মিল নেই।
লেখার জন্য নাকি ভাবনার প্রয়োজন হয়। তবে কি লেখক সাফায়েত তখন অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে
ভাবছে। যদি তার ভাবনার পুরোটা জুড়েই নবনীতা থাকতো তবে গল্পের এসব নারী চরিত্ররা নিশ্চয়ই
দেখতে নবনীতার মতই হতো। সাফায়েত তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে গল্প আর বাস্তব এক
নয়। ভিন্ন ভিন্ন গল্পের প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র সৃষ্টি করতে হয় গল্পকারের।
এসব চরিত্রের সাথে গল্পকারের ব্যক্তিগত জীবন, কিংবা জীবনের সাথে মিশে থাকা বাস্তব চরিত্রগুলো
যে সবসময় মিলবে তেমনটা নয়। টেবিল চেয়ারে বসে, খাতা কলমের ভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ
থাকে এসব চরিত্রগুলো। যদিও সেই চরিত্রগুলো নিয়ে পাঠকদের ময়নাতদন্তের শেষ নেই। অবশ্য
তাতে গল্পকারের কোন আপত্তি নেই, কোন বাঁধা নেই, বাধা দেওয়ার সময় নেই। গল্পকার তখন
নতুন গল্পের খোঁজে ব্যস্ত থাকে। কিংবা একটা গল্প থেকে আর একটা গল্পে যাওয়ার মাঝের
সময়টাতে সুন্দর সময় কাটায় প্রেমিকার সাথে।
কিংবা প্রেমিকাকে সাথে নিয়েই নতুন গল্প খোঁজে। নবনীতার সন্দেহ আর নবনীতার বাড়ির মন্তব্য
দিনে দিনে তাদের দুইজনের সুন্দর সময়কে বিষিয়ে তুলছিল। এত বছরের প্রেমে যে মনোমালিন্য
হয়নি কখনো, তা হয়ে গেল মুহূর্তেই, কয়েক মাসের মধ্যেই। নবনীতার সোজাসাপ্টা কথা -
অন্য কাউকে ভেবে লেখালেখি করা চলবে না। আমার পরিবারের পছন্দের ভালো একটা চাকরি জোটাতে
হবে। তবেই তুমি আমাকে পাবে। এখন তুমি ভেবে দেখো লেখালেখিটাই করবে, নাকি লেখালেখি ছেড়ে
আমাকে বিয়ে করবে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে
সাফায়েতের মাথায় যেন তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সবকিছু জেনে স্বেচ্ছায় যে মেয়েটা
প্রেম করেছিল এক লেখকের সাথে, প্রেমের এতগুলো বছর পর এসে পরিবারের কথা পূরণ করতে সেই
লেখককেই কিনা বলছে লেখালেখি ছেড়ে দিতে। একজন লেখক ই জানে লেখালেখিটা তার রক্ত। রক্ত
ছাড়া কি আর জীবন বাঁচে? আর জীবনই যদি না থাকে, প্রেম থাকবে কোথায়? সেই সময় গুলো
যেন সাফায়েত দ্বিধার মধ্যে বেঁচে ছিল। কি করবে, কি সিদ্ধান্ত নিবে, তার কি করা উচিত
কোন কিছুই যেন সে ভেবে উঠতে পারছিল না। অথচ এই সাফায়েত তার অনেক গল্পে অনেক অনেক সমস্যার
সমাধান দিয়েছে গল্পের ছলে। অথচ গল্পকার নিজের গল্পের সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না নিজেই।
দূরত্ব বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে তথাকথিত ব্যস্ততা। যে মুখ না দেখলে ঘুম হতো না দুজনের
কারোর ই, সেই মুখ যেন আজ রাজ্যের অভক্তির কারণ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলো। পরীক্ষার
রেজাল্ট হল। তারপর হঠাৎ করেই হারিয়ে গেল নবনীতা। সাফায়েত যেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের
এই চার-পাঁচ বছর একটা স্বপ্নের মধ্যে ছিল। যেন স্বপ্নের মধ্যে যে প্রেমিকাকে আদর করেছে
বহুবার বহুভাবে, ঘুম ভাঙতেই দৃশ্যমান বাস্তবতায় ছুঁয়ে দেখার কোন সুযোগ নেই সেই প্রেমিকাকে।
কখনো কখনো জীবন এমন কঠিন হয়। খুব করে চাওয়া ইচ্ছে গুলো পূরণ হয় না এক জীবনের বিনিময়েও।
No comments