Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৩৩

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer


শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৩৩

সাফায়েতের বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে দুজন। নবনীতা দূরের বিল্ডিংগুলো দেখছে। আর সামনের পেট সমান ইটের রেলিং ছুঁয়ে সাফায়েত তাকিয়ে আছে তার প্রাক্তন প্রেমিকার দিকে। ছাদের এক কোণায় গুলুবাবু টিনের প্লেটে ভাত খাচ্ছে। গুলুবাবু এখন সাফায়েতকে মনিব মানে। আগের থেকে বড় হয়েছে, নাদুশনুদুশ হয়েছে।

তোমার আমার মাঝে দূরত্ব কেমন জানো? -  প্রশ্ন করলো নবনীতা।

কেমন? - জানতে চাইলো সাফায়েত।

দূরের ওই বিল্ডিংগুলোর মত। দেখা যাচ্ছে। তবে ছুঁয়ে দেখতে পারছি না। - উত্তর দিলো নবনীতা।

আচ্ছা, আমরা যদি জীবন থেকে মাঝের পাঁচটা বছর ভুলে যাই! - বললো সাফায়েত।

: মানে?

: মানে হল মহাকালের কাছে আমাদের জীবনটা হয়তো অনেক ছোট। তবে আমাদের কাছে তো আমাদের জীবন অরেক বড়, তাই না? আর এই বড় জীবন থেকে মাঝের পাঁচটা বছর ভুলে গেলে আহামরি কোনো ক্ষতি হবে না হয়তো?

রাতে খাবে কি? - সাফায়েত প্রসঙ্গ এড়াতে চাইলো নবনীতা।

: গতকাল রাতের ফুলকপির তরকারি আর ডাল রয়ে গেছে। রাতে খাওয়ার আগে শুধু ভাত রান্না করতে হবে। এখন তো বুয়া নেই। নিজের মত নিজে যতটুকু পারি এক তরকারি রান্না করে তিনদিন খাই।

: কেমন রান্না করো?

: মোটামুটি, পেট চালানোর মত। রান্না করি তো বাধ্য হয়ে। ধ্যানজ্ঞান সব তো লেখালেখি নিয়ে।

: হুম, এখন তো আমিও নেই।

: হ্যাঁ, তুমিও নেই যে তোমাকে নিয়ে সাধনা করবো।

: আমি বলেছি আমিও তো নেই যে আমি রান্না করে খাওয়াবো তোমাকে।

: তুমি আছো তো। তবে তুমি আমার মত করে আর আমার নেই।

: তোমার সাথে কথায় পারি না।

: কালকে ফুলকপির তরকারিতে একটু লাবণ বেশি হয়ে গেছিলো।

: একটা আলু ছোট ছোট করে কেটে তরকারির সাথে চুলায় কিছুক্ষন রাখলে লবণ কমে যাবে।

: অনেকদিন তোমার হাতের খেচুড়ি খাই না। খাওয়ার মত সুযোগ আর সম্পর্ক নেই যে।

: শেষবার আমার হাতের রান্নাটাই না হয় বাকিটা জীবন মনে রাখো।

: তা অবশ্য থাকবে। এই স্বাদটা কখনো ভুলতে পারবো না।

: তবে আমি চাই তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি তোমার মনে থাকতে চাই না। তোমার মন আরো ভালো মানুষ ডিজার্ভ করে।

: তোমার মনে আমার জন্য জায়গা নেই সেটা সরাসরি বললেই তো পারো।

: এখন থেকে কম কম রান্না করবে। তা না হলে খাবার নষ্ট হয়ে যাবে। আর একটা ফ্রিজ কিনে নিতে পারো তো।

: মাঝের বছর গুলো ভুলে তুমি আবারো ফিরে আসবে এই স্বপ্নেই আজও ফ্রিজটা কেনা হয়নি।

: সবসময় দুষ্টুমি?

: আমার কোনো কথা কি তুমি সিরিয়াসলি নিতে পারো না?

: নিয়ে কি হবে বলো?

: প্রেম হবে।

: তুমি আসলে কি বোঝাতে চাইছো?

: আমাদের পাঁচ বছরের প্রেমের বিশাল একটা ইতিহাস আছে। আমার চায়ে কম চিনির কথা যখন মনে রেখেছো, তাহলে আমি নিশ্চিত আমি যেটা বলতে চেয়েছি তুমি সেটাই বুঝেছো।

: তোমার পরিবার আছে। তোমার একটা সমাজ আছে। মানবে না, কেউ আমাকে মানবে না।

: মানুষের মানা না মানার থেকে আমাদের ভালো থাকাটা বেশি দরকারি তো।

: অসহায়কে দয়া করতে হবে না। আমি একা বাঁচতে শিখে গেছি।

: দয়া করছি না। সত্যি, আমি তোমাকে এখনো প্রথম দিনের মতই ভালোবসি।

চলো তোমার রুমটা দেখি কেমন সাজিয়েছো এখন। - প্রসঙ্গ বদলাতে চাইলো নবনীতা।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

হ্যাঁ, শুধু সময়গুলো বদলেছে। আগে তোমার সাথে প্রেম ছিল। রুমমেটদের সাথে আড্ডা ছিল। সময়ের ব্যবধানে সবই এখন অতীত। তখনকার সেই রুমমেটগুলো, কারো সাথে এখন সেভাবে আর যোগাযোগ নেই। তুমি কিংবা তোমার ভালোবাসা সেটাও আমার কাছে এখন অতীত স্মৃতি। আমার জন্য সৌভাগ্যবশত আর তোমার জন্য দুর্ভাগ্যবশত আজকে তোমার জন্মদিনের এই দিনে সৃষ্টিকর্তার তোমার আমার দেখা করিয়ে দিলেন। - ছাদ থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে হাস্যজ্জ্বল সাফায়েতের  সাবলীল প্রতুত্তর।

ভালোই করেছেন সৃষ্টিকর্তা। বহু বছরের পুরোনো প্রেমিককে কাছে পেয়ে হৃদয়ের জমাট বাঁধা পাথর একটু একটু করে ভেঙে আজ আমি বাড়ি ফিরবো হালকা শরীরে। - রুমে রাখা দুটো চেয়ারের একটাতে বসলো নবনীতা।

আমার বেশিরভাগ সৃষ্টি ই এই ঘর থেকেই শুরু। তোমাকে নিয়ে লেখা শত কবিতা কিংবা বেশকিছু উপন্যাসের পুরোটাই সাজিয়েছি এই ঘরে বসেই। এই সৃষ্টিগুলো আমাকে নিয়ে গেছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আমার জন্য তো এই ঘরটা আশীর্বাদ। - হাসতে হাসতে অন্য চেয়ারটাতে বসে হেলান দিয়ে শরীর ছেড়ে দিলো সাফায়েত।

তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা দিন যেন ধারাবাহিকভাবে আমার মস্তিস্ককে নাড়া দিচ্ছে। তোমার সাথে যেদিন প্রথম এসেছিলাম তোমার এই বাসাতে, মনে আছে তোমার সেই দিনের কথা? - স্মৃতিরোমান্থনে তখন নবনীতা চোখদুটো উদ্ভাসীত।

কেন মনে থাকবে না! তুমি আমার পিছে পিছে আসছিলে আর আমি চারপাশ ভাল করে খেয়াল করছিলাম কেউ আমাদের দেখছে কিনা। তোমাকে কফি খাওয়ায়েছিলাম। ডুবেছিলাম তো তোমার মাঝে। আরেকবার তো অঘটন ঘটতে ঘটতেও ঘটেনি। প্রেমের সবচেয়ে সুন্দরতম সময়ে তুমি আমি দুজনে যখন উন্মাদ হওয়ার পথে হঠাৎই পাশের রুমের ছোট ভাইয়ের বাবা এসে হাজির। - বলেই হো হো করে হেসে উঠলো সাফায়েত।

আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম সেদিন। শত হলেও এরকম অভিজ্ঞতা সেটাই প্রথম। এরকম পরিস্থিতিতে তুমি আমাকে ছাড়তে চাও নি। আর আমিও চাইনি। তুমি আমার মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলে যেন আমার গুংরানোর শব্দ পাশের রুমে থাকা অন্যদের কানে না যায়। - আবেগী নবনীতার উদাসী স্মৃতিরোমান্থন।

বাহ তোমার তো দেখছি সব মনে আছে! - অবাক হলো সাফায়েত।

কেন থাকবে না? তুমি ছিলে আমার প্রথম প্রেমিক। এরকম সুন্দর সময় তুমিই আমাকে প্রথম উপহার দিয়েছো। এই উপহার কি আর ভোলা যায়! - ঘুরে ঘুরে পুরো বাসাটা দেখছে নবনীতা।

হ্যাঁ তারপর একটা মিথ্যে নাটক সাজিয়ে বাকি সবাইকে পাশের রুমে আটকে রেখে তোমাকে নিয়ে আমি বের হয়ে গেলাম। - যোগ করলো সাফায়েত।

আর বাইরে যাওয়া মাত্রই সে কি বৃষ্টি! সেদিনই প্রথম তুমি আমি বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। বাকিরা বৃষ্টিতে ভিজে যৌনতা অনুভব করে। আর আমি তোমার সাথে যৌনতায় মিলে বৃষ্টিতে ভিজে ষোলোকলা পূর্ণ করেছিলাম। - নবনীতার আগুন উত্তাপ চোখে যেন প্রেমের স্ফুলিঙ্গ লেগে আছে।

No comments

Powered by Blogger.