Header Ads

বাংলা বসন্ত || শাহরিয়ার সোহাগ

শাহরিয়ার সোহাগ, poem by Shahriar sohag, bangla poem pic, bangla poem, bangla poem pic, bangla poem collection

দেশের সব শহর গ্রামের কোণায় কোণায় আন্দোলনের আগুন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার নিজের গদি বাঁচাতে কৌশলে ইন্টারনেট সেবাকে নিজেদের ইচ্ছামত ব্যাবহার করছে। তাই প্রকৃত খবর, পুলিশি হামলার প্রকৃত তথ্য খুব একটা প্রকাশ্যে আসছে না, প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছাচ্ছে না। আর দেশের টিভি চ্যানেলগুলো তোতা পাখি হয়ে গেছে। সবগুলোই সরকারের শেখানো বুলি বলছে। একই খবর, সরকার পীর। আমজনতা গোষ্ঠির সমর্থকরা মুরিদ। আর সাধারন ছাত্র জনতা সব দেশদ্রোহী, রাজাকার। সরকারের কথার বাইরে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তো চ্যানেল বন্ধ করে দেবে সরকার। সরকারের এই আচোরণ তো বেশ পুরোনো। যুক্তিতে যখন না পারার ভয়, দুর্নীতি আর অসততা যখন গলা পর্যন্ত, তখন অন্য কাউকে কথা বলতে দেবে না এটাই তো স্বাভাবিক।

রুলিং পার্টির বাড়তি নজর পাওয়ার জন্য অসিত কুমার নামে পঞ্চগাছার এক স্বৈরাচারী দালাল কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর আম-ছাত্র গোষ্ঠী কর্তৃক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রূপে সশস্ত্র অত্যাচার করার জন্য ইন্ধন দিয়েছিল এবং হামলায় সফল হওয়ায় পুরস্কার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আম-ছাত্র গোষ্ঠীকে নগদ টাকা ও রাতে বিরিয়ানি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এই হামলাকারীদেরকে প্রকাশ্যে  প্রশংসাও করেছে। আর আন্দোলন করা, আন্দোলনে সমর্থন দেওয়াদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে প্রকাশ্যে। অসিত কুমার চট্টগ্রামের এক মন্ত্রীর খাতা কলেমে বিশেষ সহকারি হলেও খাতা কলমের বাইরে মন্ত্রীর অপকর্মের ডানহাত হিসেবেই পরিচিত। আন্দোলনের এই সময়টাতে নিজের সব কাজ ফেলে যেন মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। সরকারের সমালোচনা করে কেউ পোস্ট করলে সে আর তার লেলিয়ে রাখা অছাত্র গুন্ডা বাহিনী পোস্ট দাতাকে রাজাকার প্রমাণ করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। যেন দেশে কেবল তারাই দেশপ্রেমিক। তাদের এই আক্রমণার্থক আচোরণকে শৈল্পিকভাবে সমর্থণ দিচ্ছে সদরঘাটের একটা খ্রিস্টান কলেজের বাংলা বিষয়ের এক শশিক্ষক, যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলিং পার্টি সমর্থিত সাবেক ছাত্রনেতা। 

সময়ের মেধাবী সন্তানেরা যাঁরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত তাঁরা প্রায় সকলেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে। সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলক বন্ধ ঘোষণা করে জোরপূর্বক আবাসিক হলগুলো খালি করে দিলে নির্যাতনের ভয়ে সবাই জীবন বাঁচাতে নিজ বাড়িতে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। তবে আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করায় এই শিক্ষার্থীদেরকে রাজাকার, দেশদ্রোহী ট্যাগ দিয়ে এই অসিত কুমার তার অনুগত সহকারী পিরোজ, পিকুল, জকি, আকিলকে দিয়ে এই সকল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বা মুঠোফোনে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। সরকার দলের সুবিধাবাদী চেটে খাওয়া শ্রেণী মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে তাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার, প্রকাশ্যে ধর্ষণ করার।  অসিত কুমারের ইন্ধনে এসব অপকর্মের নেতৃত্বে ছিল পিরোজ। হুমকিদাতারা কলেজের গন্ডি পেরিয়ে আর পড়াশোনা না করে দলীয় নেতার পাচাটা ছাত্রনেতা, পদপ্রত্যাশী অছাত্র। এটা যতটা হাস্যকর, ততটাই ঘৃণার। ভয়ে শিক্ষার্থীরা অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।

মন্ত্রীর আশির্বাদপুষ্ট হয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া অসিত কুমার পঞ্চগাছা শহরে নতুন বাড়ি করেছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারে বড় হওয়া অসিত নিজের বিয়েতেই খরচ করেছে অর্ধকোটি টাকা। গাড়ি কিনেছে। বউকে ঘুম পাড়িয়ে নিজ এলাকার পদপ্রত্যাশী, পদধারী সুন্দরি মেয়েদেরকে নিয়ে সেই গাড়িতে করে রাতবিরাতে লংড্রাইভেও যায়। দেশের স্কুল - কলেজ এমপিওভুক্ত করার নাম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিভিন্ন শিক্ষা প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, পুলিশসহ বিভিন্ন চাকুরির নিয়োগ বানিজ্য এবং তদবির বাণিজ্য থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে নিজ এলাকার একটা কলেজের ম্যানেজিং সভাপতিও হয়েছে অসিত। ঢাকার মোহাম্মদপুরের হাউজিং লিমিটেড আবাসিক এলাকাতে কোটি টাকা দিয়ে ফ্লাট কিনেছে। সেই একই বিল্ডিং এ অসিত কুমারের সামনের ফ্লাট কিনেছে পঞ্চগাছা থানার বর্তমান ওসি বাহার উদ্দিন। আম-ছাত্র গোষ্ঠীর সাবেক নেতা এই বাহার উদ্দিন হালিমা সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই অন্যদের টপকে ওসি হয়ে যায়।

পিরোজ উপজেলা আম-ছাত্র গোষ্ঠী  কমিটিতে পদ বঞ্চিত হলে তার অনুসারীদের নিয়ে মিছিল করেছিলো জেলা কমিটির বিপক্ষে। তখন অসিত কুমার তার নিজের নিয়ন্ত্রিত কলেজে আইসিটি ডিপার্টমেন্টে চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার  অপারেটরের চাকরির মাধ্যমে তাকে আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনে। এই নিয়োগ ও পিরোজের একাডেমিক কাগজপত্র নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। লোকমুখে প্রচলিত আছে এই পিরোজ দলীয় কোটায় চাকরিটা বাগিয়ে নিয়েছে। পড়াশোনা না করা অছাত্র হয়েও ছাত্র সংগঠনের উপজেলা শাখার শীর্ষ পদে আসার ইচ্ছে পূরণ না হলেও কম্পিউটার অপারেটর হয়ে নিয়মিত কলেজের স্টুডেন্টদের আইসিটি  ক্লাস নিয়ে শিক্ষাগুরু হওয়ার ইচ্ছেটা পূরণ করতে পেরেছে তার প্রিয় অভিভাবক অসিত কুমারের বদৌলতে।

নিজের টাকায় পোস্টার বানিয়ে পোস্টারে ছাত্রনেতা দাবি করা আরেক অছাত্র পিকুলের চাটা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় থেকেই। ঢাকাতে আন্দোলনের মাঠে থাকা ছাত্ররা স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন অরাজকতা প্রমাণ সহ প্রকাশ করছিল, আর শত শত মাইল দূরে বসে, মোবাইলে ইন্টারনেট কিনে পিকুল তাদের সবাইকে গুজব ছড়ানোর অপবাদ দিচ্ছিল, দেশোদ্রোহী, রাজাকার বলছিল। তাতে পিকুলেরও অবশ্য লাভ হয়নি। এত পরিশ্রম, দালালির পরও ছাত্র সংগঠনের পদ পায় নি। আর এখন তো বয়সও শেষ। তাই সুযোগে শেষবারের মত আরেকটু চেষ্টা করছে।

পঞ্চগাছার নেহাল যাকে এখন সবাই পরিচালক নেহাল হিসেবেই বেশি চেনে, স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সে যখন পড়াশোনা করতে এলাকা ছেড়েছিল তখন এখনকার পাতি ছাত্রনেতা আকিল ক্লাস টুতে পড়তো। খেলার মাঠের বল কুড়িয়ে দিতো। সেও এখন অসিত কুমারের ছায়া পেয়ে নেহালকে হুমকি দেয়। চলমান ছাত্র জনতার সংগ্রাম আন্দোলনে সক্রিয় নেহালকে সে হুমকি দিয়েছিল- নেহালের ছোট বেলায় কি কি করেছে সেসব নাকি আকিল জানে, তার কাছে প্রমাণ আছে।

এদের মধ্যে তুলনামূলক শিক্ষিত ছাত্রনেতা জকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে অসিত কুমারের সেখানকার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের স্ত্রীকে শিক্ষক বানিয়েছে অসিত। ক্যাম্পাসে থাকা নিজের স্ত্রীর বাজার করার মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এই জকি। যতভাবে অসিত কুমারের ঘনিষ্টজন হওয়া যায় আর কি। এসব চুনোপুটি পাতিনেতারা কাজে কর্মে যতটা অসিত কুমারকে স্মরণ করে, জন্ম দেওয়া কিংবা খাইয়ে বড় করা নিজের আপন মা-বাবাকেও ততবার স্মরণ করে না। অভিভাবক হিসেবে পরিচয় দেয় না।


বাংলা বসন্ত || শাহরিয়ার সোহাগ

অর্ডার করুন রকমারিতে 


No comments

Powered by Blogger.