Header Ads

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন প্রতিটি মানুষকে ছুঁয়ে যাচ্ছে || শাহরিয়ার সোহাগ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন প্রতিটি মানুষকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic bangla poem, bangla poem for love, small bangla

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন প্রতিটি মানুষকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন প্রতিটি মানুষকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, আমাদের সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্লাস্টিক দূষণ বর্তমানে আমাদের নদী-নালা, বনাঞ্চল এমনকি খাদ্যচক্রেও ঢুকে পড়েছে। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের রিনিউএবল এনার্জি, রিসাইক্লিং এবং সচেতনতার দিকে নজর দিতে হবে। তরুণদের স্কিলফুল হতে হলে এ ধরনের কার্যক্রম এ আমাদের অংশ খুব এ জরুরি। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।


পলিমাটির উর্বর :

সমুদ্র পরিবেষ্টিত ও নদ-নদী স্নাত আবহমান বাংলা পলিমাটির উর্বর ক্ষেত্র। ধনধান্য পুষ্প ভরা শ্যামল বাংলা চিরায়ত এক সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে স্বদেশী কবি-সাহিত্যিক ও ভিনদেশী পর্যটকদের প্রশংসায় ধন্য হয়েছে ফরাসি পরিব্রাজক বার্নিয়ার বলেছিলেন, শ্যামল বাংলায় প্রবেশের পথ অনেক খোলা থাকলেও বেরুনোর পথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অর্থাৎ নয়নাভিরাম সবুজ বাংলায় ঢোকার পর তার শ্যামলের মহাসমারোহে নয়ন, মন এমনই আপ্লুত হয় নিগমের চিন্তাও করা যায় না। যুগ আর কালের সমৃদ্ধ বাতাবরণ। কবি গুরুর আমার সোনার বাংলার চিকিমিকি শ্যামল সবুজের আভরণে সত্যিই এক অনন্য বঙ্গভূমির মর্যাদায় আসীন ছিল। তেমন ঝলমলে বিশুদ্ধ বাতাবরণ ক্রমান্বয়ে ফিকে আর বিপন্নতার আবর্তে আটকে যাওয়াও পরিবেশ প্রকৃতির লাগাতার দাবানল। যা কি না ১৭৬০ সালের শিল্পবিপ্লবের ফল হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্ন থেকেই। যন্ত্র সভ্যতার কার্বন নিঃসরণে বাতাসে যে বিপরীত প্রদাহ তা বুঝতেও বিশ্ববাসীকে লাগাতার এক শতক অপেক্ষা করতে হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশক থেকেই নৈসর্গ বিজ্ঞানীরা জোরেশোরে আওয়াজ তুলতে লাগলেন প্রকৃতি তার সহজাত নৈসর্গিক বাতাবরণ থেকে ক্রমশ যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শুধু যে খরতাপতা কিন্তু নয় অসময়ে বৃষ্টির ধারা জনজীবনের দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। ষড়ঋতুর বিচিত্র লীলাভূমি আমাদের এই ক্ষুদ্র পলিমাটির উর্বর দেশ। সোনার ফসলে কৃষক আর গৃহস্থের গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আবহমান বাঙালির যে খাদ্যের স্বয়ং সম্পূর্ণ তাও এই বরেন্দ্র উপকূলীয় অঞ্চলটি তার আপন শৌর্যে মহীয়ান থেকেছে কাল থেকে কালান্তরে। আজ আমরা ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যিক নির্মল পরিবেশে অবগাহনে যেন ক্রমাগত বিচ্যুতির ধারায় প্রকৃতিকে নয়ছয় অবস্থায় দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। নৈসর্গবিদরা বলছেন এমনটা হওয়ার কথা নয়। প্রকৃতির নির্মল, সহজাত পরিমণ্ডল নৈসর্গেরই অবিস্মরণীয় অবদান। সেখানে প্রকৃতির কোলে লালিত মানুষদের যে নব সৃষ্টির প্রখর আবেদন, যান্ত্রিক কলা-কৌশলের অত্যাধুনিক উদ্ভাবন তাতে চিরায়ত সবুজঘেরা প্রান্তর তার আপন সীমানায় লঙ্ঘিত হতেও পেছন ফিরে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার চার পাড়ের সুস্থ, নির্মল আর বিপন্ন ঠেকানোর অপ্রতিরোধ্য এক স্বচ্ছ বাসভূমি। যা বিভিন্নভাবে প্রকৃতির সন্তানদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়াও নৈসর্গের ওপর চরম বিপরীত চাপের নবতর কঠিন এক পৃথিবী। যেখানে প্রতি মুহূর্ত জীবনাচরণের শ্বাস-প্রশ্বাস বিঘ্নিত হচ্ছে। 


প্রায় এক শতক পার হয়ে যাওয়ার আর এক জালাময়ী প্রতিবেশ। মানুষ কিন্তু  উদ্ভাবন-আবিষ্কারে ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। থেমে থাকার পরিবেশ নেই বললেই চলে। আর প্রকৃতিও তার মূল বৈশিষ্ট্য থেকে পেছন হটা পরিস্থিতিরই দায়বদ্ধতা।  এখান থেকে নতুন কিছু ভাবার অবকাশ যতই পিছু হটবে ততই আগামীর পৃথিবী কোথায় গিয়ে ঠেকবে তাও এক অনির্ধারিত জীবন চলার কণ্টকিত যাত্রাপথ। নদী ও সাগর তীরবর্তী জনগণের জন্য তা আরও যেন এক নিত্য লড়াই। মোকাবিলা করতে করতে শান্ত, ক্লান্ত হলেও এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ তাদের অজানা এক বিস্ময়। ভাবতেই পারছে না নির্মল নৈসর্গের যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তার দায়ভার কিন্তু প্রকৃতির কোলে লালিত জ্ঞানী-গুণী বিজ্ঞানীদের। কারণ তাদের আধুনিক সৃষ্টির দ্যোতনায় কোনো এক জায়গায় লাগাম টেনে ধরা উচিত বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আহ্বান, আবেদন জানিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু ফল শূন্যের কোঠায়। তথ্য-প্রযুক্তির অত্যাধুনিক বলয়ে মানুষের মধ্যেও যে ক্রমবিচ্ছিন্নতা তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়াও জরুরি।  

বাংলাদেশের অবস্থা ততোধিক শোচনীয়। ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চল তাণ্ডবে পরিণত হওয়া সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য এক বিপদাপন্ন প্রতিবেশ। তার সঙ্গে চিরকালীন এক সংগ্রামী আখ্যান নৈসর্গের দুরন্ত ঝড়-ঝাপটা। কক্সবাজার, মহেশখালী, মাতারবাড়ি এমন সব উপদ্রুত অঞ্চলের নদী ভাঙন বসতবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া এক নিয়মিত পালাবদল। কালবৈশাখীর ঝড়-ঝাপটা ছাড়াও উন্মত্ত নৈসর্গ কখন যে তার আগ্রাসী রূপে মানুষের জানমাল-বসতভিটাকে ভাঙনের খেলায় উন্মত্ত করে তোলে তাও এক অস্থির সমন্বয়ের সম্মুখ সমর। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে এক প্রকার অভ্যস্ত হয়ে যায় উপকূলীয় অতি সাধারণ মানুষ। রুজি, রোজগারের সঙ্গে অনবচ্ছেদ এমন সব প্রকৃতির লীলাখেলা। শুধু কি সমুদ্র আর নদ-নদীর অবিশ্রান্ত জোয়ারের উন্মত্ত খেলা? তার সঙ্গে নারী ও শিশুদের জীবনের ঘানি টানা আর এক বিপরীত প্রদাহ। কৃষি ও মৎস্যজীবীদের লড়াই-সংগ্রাম প্রতিদিনের এক সমস্যাসঙ্কুল কঠিন জীবনের ঘানি টানা। তবে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়াও প্রকৃতি, পরিবেশের ভিন্নমাত্রা অপঘাত তো বটেই। চৈত্র-বৈশাখের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় তার ঋতুকালীন প্রভাব বিস্তার করলেও এখন সেখানেও ভর করেছেন চরম দুঃসময়। 


আমরা এখন পার করছি বৈশাখ মাসের খরতাপ আর মাঝে মধ্যে বাতাসের  উদাত্ত আস্ফালন। সামনে অপেক্ষা করছে জ্যৈষ্ঠের আগুনের আর এর দগ্ধ হাওয়া। সঙ্গে দমকা হাওয়ার প্রাবল্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে খুব বেশি সময়ও লাগে না। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী আর সাগর তীরের অধিবাসীরা তো এমন ঝড়-ঝাপটা সামলিয়ে যাপিত জীবনকে নির্বিঘ্ন আর নিরবচ্ছিন্ন করতে হিমশিম খায়। হরেক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বজ্রপাত নামক আর এক কঠিন ধকল জনগণকে ব্যাকুল করে তোলে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা ঘন মেঘে লাগাতার বৃষ্টিস্নাত বাংলায় বজ্রপাতের হুঙ্কারে মানুষের বিচলিত হওয়া আর এক অসহনীয় দুর্বিপাক। যা প্রকৃতির বৈরীভাবের অনিঃশেষ যাতনাই শুধু নয় মরণ কামড় বললে বেশি বলা হয় না। আর বজ্রপাতের মরণের ঝুঁকিতে থাকতে হয় বেশি গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মানুষদের। যাদের খোলা আকাশের নিচে উদায়াস্ত পরিশ্রম করতে হয় রুজি, রোজগারের জন্য। সেখানে নাকি মাঠে চাষ করা কৃষক আর অবকাঠামো তৈরিতে নির্মাণ শ্রমিকরা। যাদের  কর্মযোগের যথার্থ স্থানই খোলা আকাশের নিচে। ঘন ঘন বজ্রপাতের জন্য অবলীলায় উন্নয়নের নামে উঁচু বৃক্ষ কর্তনকেই দায়ী করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

No comments

Powered by Blogger.