Header Ads

রাখাইনের জন্য করিডর : বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি ও কৌশলগত প্রভাব || শাহরিয়ার সোহাগ

রাখাইনের জন্য করিডর, বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি ও কৌশলগত প্রভাব, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic bangla poem, bangla poem for love, small

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চীন, ভারত ও মিয়ানমার যে করিডর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, বিশেষ করে চীনের চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডর (CMEC), তা বাংলাদেশের জন্য বেশ কয়েকটি কৌশলগত ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগ তৈরি করছে। এই করিডরের মাধ্যমে রাখাইন প্রদেশের কিয়াউকফিউ থেকে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং পর্যন্ত রেলপথ, মহাসড়ক, গ্যাস ও তেল পাইপলাইন নির্মাণ হচ্ছে। করিডরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বঙ্গোপসাগরে চীনের সরাসরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। এর ফলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং নিরাপত্তা কৌশল নতুনভাবে ভাবতে হচ্ছে।

প্রথমত, এই করিডর চীনের বঙ্গোপসাগরে সামরিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব জোরদার করবে, যা ভারতের উদ্বেগের বিষয়। চীন যদি এই করিডরের মাধ্যমে রাখাইনে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে এবং ভবিষ্যতে সেটি নৌঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে তা ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যও সমুদ্র নিরাপত্তার বড় হুমকি হয়ে উঠবে। এতে করে বঙ্গোপসাগরে সামরিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে এই করিডর আরও জটিলতা তৈরি করছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বসবাস করা এলাকাগুলোকেই মূলত ‘উন্নয়নের জন্য ফাঁকা’ করে তোলা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন থেকে সরে রাখাইন অঞ্চলের উন্নয়নে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়তে পারে। এতে করে বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

তৃতীয়ত, নিরাপত্তা ঝুঁকির দিক থেকেও করিডরটি গুরুত্বপূর্ণ। রাখাইনে সক্রিয় আরাকান আর্মি ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে। চীন এই অঞ্চলে বিশাল বিনিয়োগ করছে বলে মিয়ানমার সরকার সেখানে কঠোর সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। এসব সংঘর্ষ সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ অঞ্চলেও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে বান্দরবান, নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফে এর প্রভাব পড়তে পারে।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

চতুর্থত, রাখাইন করিডর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতিযোগিতায়ও প্রভাব ফেলতে পারে। যদি রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি বিকল্প বাণিজ্যিক গেটওয়ে হয়ে উঠতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পেতে পারে, বিশেষ করে যদি নেপাল বা ভুটান ভারতের মাধ্যমে এই করিডর ব্যবহার করে।

বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে করিডরটি দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে – করিডর উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চীনের সঙ্গে আরও জোরালো কূটনীতি, এবং নিজেদের সামুদ্রিক ও সীমান্ত নিরাপত্তা সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুন মিয়ানমারকে ঘিরে আসলেই কি কোনো 'প্রক্সি ওয়ার' চলছে ?

আরও পড়ুন রাখাইনে করিডোর বাংলাদেশের ভেতর দিয়েই কেন ?

No comments

Powered by Blogger.