তার সাথে আমার পরিচয় একটা ধারাবাহিক নাটকের সেটে। খুব কাছ থেকে তাকে দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা। অতঃপর ফেসবুকে এ্যড হলাম, টুকটাক চ্যাট হত। একপর্যায়ে তাকে জানালাম আমার লেখালেখির কথা। -'আমার দুইটা বই আছে। কিছু টিভি নাটকও লিখেছি। আমি আপনাকে সেগুলো দিতে চাই। আপনি চাইলে সেগুলো কাজে লাগাতে পারেন।' লেখালেখির কথা শুনে তিনি খুশি হলেন। এটাও জানতে পারলাম যে তার কিশোর উপন্যাস পছন্দ।
- কিভাবে দেব?
- একদিন বাসায় এসো।
- আপনি একজন বড় অভিনেত্রী। সবসময় তো বিজি থাকেন।
- ২৩ তারিখ ফ্রি আছি, আসতে পারো।
- তাহলে ২৩ তারিখ বিকাল ৪ টাই আসি।
- ওকে।
আমি অনেকটা অবাক। তিনি আমার প্রিয় একজন অভিনেত্রী। মিডিয়াতে আসার আগে তার দর্শন পাওয়া আমার কাছে ছিল স্বপ্নের মত। তাকে খুব কাছ থেকে দেখলাম ই, সেই অভিনেত্রী কিনা আমার বই পড়তে চাইলেন। এমন কি তার বাসায় দাওয়াতও দিলেন। আমি শুধু অবাক ছিলাম না। অনেক বেশি কৌতূহলীও ছিলাম।
আমি অনেকটা অবাক। তিনি আমার প্রিয় একজন অভিনেত্রী। মিডিয়াতে আসার আগে তার দর্শন পাওয়া আমার কাছে ছিল স্বপ্নের মত। তাকে খুব কাছ থেকে দেখলাম ই, সেই অভিনেত্রী কিনা আমার বই পড়তে চাইলেন। এমন কি তার বাসায় দাওয়াতও দিলেন। আমি শুধু অবাক ছিলাম না। অনেক বেশি কৌতূহলীও ছিলাম।
আমি আহামরী কোন কাজ না করলেও সর্বদা কোন না কোন কাজ নিয়ে বিজি থাকি। ২৩ তারিখের একটা মিটিং পিছিয়ে দিলাম। প্রিয় অভিনেত্রীর বাসায় চা খাওয়ার দাওয়াত বলে কথা। চা খাওয়ার কথা ছিল না। তবে বাসায় দাওয়াত করলে এককাপ চা তো আশাই করতেই পারি।
২৩ তারিখ। সকালের মধ্যেই নিজের কাজ শেষ করে না খেয়ে দুপুরেই রওনা হলাম। ধানমন্ডি থেকে উত্তরায় অভিনেত্রীর বাসা জ্যামসহ মোটামুটি ভালই দূরত্ব। খাওয়ার সময় নেই। এরই মধ্যে আমার লেখা বই দুইটা গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো শেষ, ভেতরে শুভেচ্ছা কথন।
উত্তরার কোন একটা জোড় সংখ্যার সেক্টরের জোড় সংখ্যার গলি। বাসা নং সেক্টরের দ্বিগুণ। ঠিকানা আর ফোন নম্বর তিনি দাওয়াতের দিনই ইনবক্স করেছিলেন।
বাস থেকে আযমপুর নেমে রিক্সা নিলাম। গন্তব্যে যাত্রা শুরু। আমার মত একজন ক্ষুদে লেখকের সাথে আমারই পছন্দের একজন বড় মাপের অভিনেত্রীর দেখা হবে তারই বাসায়, তার ই আমন্ত্রণে। কথা গুলো ভেবে নিজেই বিব্রত হচ্ছি। আর একটু পর পর নিজেই হাসি দিয়ে মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি।
ছোটবেলা থেকে অনেকগুলো বদ অভ্যাসের মধ্যে একটা ভাল গুণ বলতে পারি আমি যথেষ্ট সময়ানুবর্তীক। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমার সময় নিয়ে কোন জটিলতা হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ মিনিট আগেই পৌঁছোলাম তার বাসার সামনে। টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছে ট্যাবের আয়নায় নিজের মুখ আর চুল ঠিক করে নিলাম।
৩ টা ৫৯। অভিনেত্রীকে কল করলাম। নিজেন পরিচয়টা দিলাম। -'আপু আমি শাহরিয়ার সোহাগ বলছি। আপনি আমাকে আমার বই নিয়ে আজ আসতে বলেছিলেন।' কথাগুলো হাস্যজ্জ্বল ভাবেই শেষ করলাম। অপর প্রান্ত থেকে অভিনেত্রী বললেন- 'আমি তো বাইরে আছি। আপনি একটা কাজ করেন, রিসিপশনে বইটা রেখে যান। আমি নিয়ে নেব।' মুখে কষ্টের একটা হাসি দিয়ে বললাম- 'তাহলে আমি চলে যাই!'
উত্তরের আগেই লাইনটা কেটে গেল। অভিনেত্রী আমার শেষ বাক্য শুনেছিলেন কি না আমি জানি না।
রিসিপশনে বই দিয়ে আবাসিক কলোনীর রাস্তা দিয়ে আমার ফিরে আসা। গ্যাস বেলুন থেকে হাওয়া বের হলে বেলুন যেমন চুপসে যায়, আমার অবস্থা তখন ঠিক তেমনই। দর্শন পেলাম না প্রিয় অভিনেত্রীর। আর তার বাসায় চায়ের কাপ! অধরাই থেকে গেল।
তিনি অভিনেত্রী। বসে থাকার মত সময় তার নেয়। সম্ভাব্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছুকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। তিনিই হয়ত সেটা করেছেন। আর আমি নিজের কাজ ফেলে আমার বই দুটো তাকে দিতে গিয়েছি। কারণ এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
অভিনেত্রী, আপনার অভিনয় আমার ভালো লাগে বলেই আপনি আমার প্রিয় অভিনেত্রী। আর সেই অভিনেত্রীর বাসায় বুক সেলফে আমার দুইটা সৃষ্টি সাজানো থাকবে, এটাই আমার মত একটা ক্ষুদ্র লেখকের কাছে বেশি নয় কি? চা তো দোকান থেকেও খেতে পারব।
আপনি ভালো থাকবেন অভিনেত্রী। আর আপনার অভিনয় দিয়ে আপনি হয়ে উঠুন আরো অনেকের প্রিয় অভিনেত্রী। শুভকামনা রইল আমার প্রিয় অভিনেত্রীর জন্য।
No comments