Header Ads

পাক-ভারত সম্পর্কের সংকটময় যাত্রা : বিভাজন, উত্তেজনা ও যুদ্ধ || শাহরিয়ার সোহাগ

পাক-ভারত সম্পর্কের সংকটময় যাত্রা, বিভাজন, উত্তেজনা ও  যুদ্ধ, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic bangla poem, bangla poem for love, small bangla

পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনা আবারও চরমে পৌঁছেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, এই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে নতুন করে বড় ধরনের সংঘর্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভারতের দাবি, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের (আইআইওজেকে) বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো ভয়াবহ হামলার পেছনে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়। তবে পাকিস্তান সরকার এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে। এর পর থেকেই নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে নিয়মিত গুলিবিনিময় চলছে। এলওসি হলো আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর (এজেকে) এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মাঝে কাঁটাতারে ঘেরা, সামরিকভাবে অতিমাত্রায় সুরক্ষিত সীমান্তরেখা। এদিকে, ভারত সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং সেখানকার নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে।


ভারত-পাকিস্তান সংঘাত : একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতপূর্ণ সম্পর্কের পটভূমিতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান একাধিকবার সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে। নিচে এই দুই দেশের সংঘর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হলো:


১৯৪৭ : দেশভাগ

১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। উপমহাদেশ ভাগ হয়ে সৃষ্টি হয় মুসলিম-প্রধান পাকিস্তান এবং হিন্দু-প্রধান ভারত। এই বিভাজনে প্রায় এক মিলিয়নের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

কাশ্মীর নিয়ে অনিশ্চয়তা তখন থেকেই বিরাজমান। জাতিসংঘের সহায়তায় জানুয়ারি ১৯৪৯ সালে একটি অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে ৭৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণ রেখা গঠিত হয়, যা কাশ্মীরকে ভাগ করে দেয়।


১৯৬৫ : দ্বিতীয় কাশ্মীর যুদ্ধ

১৯৬৫ সালের আগস্টে পাকিস্তান কাশ্মীর পুনর্দখলের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ শুরু করে। এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সেপ্টেম্বরে যুদ্ধবিরতি হয়।


১৯৭১ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে পাকিস্তান সেনা মোতায়েন করে, যা ৯ মাস স্থায়ী হয়। এই যুদ্ধে আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ নিহত হন এবং বহু মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত পরবর্তীতে সরাসরি যুদ্ধে জড়ায় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।


১৯৮৯-৯০ : কাশ্মীর বিদ্রোহ

১৯৮৯ সালে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী আন্দোলন শুরু হয়। এতে সেনা, বিদ্রোহী এবং সাধারণ মানুষের বিপুল প্রাণহানি ঘটে। ভারত অভিযোগ করে, পাকিস্তান এই বিদ্রোহীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে।


১৯৯৯ : কারগিল যুদ্ধ

কাশ্মীরের কারগিল এলাকায় পাকিস্তানি সেনারা ভারতের চৌকি দখল করলে যুদ্ধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ এবং পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় পাকিস্তান পিছু হটে। দশ সপ্তাহ স্থায়ী এই যুদ্ধে অন্তত ১,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়।


২০১৯ : পুলওয়ামা হামলা

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহত হয়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে। পরে শান্তির বার্তা হিসেবে তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.