Header Ads

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ১০

শাহরিয়ার সোহাগ, story by Shahriar sohag, bangla poem pic, bangla poem, bangla love story, bangla sad story, bangla bosonto

অর্ণ তখনও দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে। দেখছিল সবসময় হাস্যোজ্জ্বল হাসির রক্তাক্ত অবস্থায় অনিশ্চিত পথ ধরে চলে যাওয়া। কোনো কথা বলার সুযোগই পেল না অর্ণ। হয়তো বা সুযোগ পেলে হাসিকে কিছু বলতো অর্ণ। ভালোবাসার প্রকাশ অথবা শুভ কামনা।

 

ব্যস্ত ঢাকা দিনে ব্যস্ত হয়ে উঠে। রাতে হয়ে ওঠে নির্জন। সেই ঘটনার পর সেই নির্জন রাস্তায় আরও কিছুদিন এসেছিল অর্ণ। অবশ্য এখন আর যাওয়া হয় না। তবে যখন যেত, তখন সে খুঁজে ফিরত তার নিষ্পাপ হাসিকে। তবে হাসি আর আসে না। হাসি হয়তো আজ ঢাকার অন্য কোনো রাস্তায়। অন্য কোনো ফুটপাতে। একই সময়ে, একই পোশাকে, একই পেশায়। তবে কী সেই বিদায় বেলায় হাসি অর্ণকে বোঝাতে চেয়েছিল তার বিদায়ের আভাস, নাকি অর্ণকে ভালোবাসে বলে অর্ণের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে এই ফুটপাতে পদচারণা, নাকি সে সত্যিই হারিয়ে গেছে কোনো দূর অজানায়। অর্ণ মেলাতে পারছে না এই প্রশ্নগুলো আর প্রশ্নের উত্তর। তার স্মৃতি বলতে অর্ণের কাছে আছে শুধু ওর উপহার দেওয়া গেঞ্জিটা। অর্ণ ভাবে গেঞ্জিটা নিজের কাছে রেখে সে কি মনে রাখবে তার প্রতি হাসির ভালোবাসার কথা, নাকি হাসিকে ভুলে যেতে ছুঁড়ে ফেলে দিবে সেটা। জীবন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করবে হাসির অধ্যায়টা।

অর্ণ এখন রাতের বেলা আর সরকারি হলুদ বাতির নিচে যায় না, তবে সাথে রেখেছে সেই গেঞ্জিটা। তাকে নগ্ন অবস্থায় দেখে মজা পাওয়া মানুষগুলো হয়তো নতুন কোনো হাসিকে পেয়ে ভুলে গেছে পুরনো হাসিকে। তবে অর্ণ? অর্ণ হাসির সেই একটা মাত্র স্মৃতি কাছে রেখে, তার এই দুর্বিষহ পথে আসার গল্পের একমাত্র শ্রোতা হয়ে থাকবে, হয়তো সেই ফুটপাতটিতে ঘুরতে ঘুরতে কোনো এক রাতে আসবে নতুন কোনো হাসি। হাসতে হাসতে নিজেকে নগ্নভাবে মেলে ধরবে মানুষরূপী পশুদের সামনে।। তবে অর্ণের বুকে মাথা রেখে কেদেছিল যে হাসি, যে হাসি জন্মের পরেই হারিয়েছিল তার মাকে, যে হাসিকে তার বাবা আদর করে বলতেনহাসি মাযে হাসি বলত হাসি হাসিখুশি সব সময়। সেই হাসি হয়তো আর কখনও আসবে না সেই হলুদ বাতির নিচে। অর্ণ হয়তো আর কখনও দেখতে পারবে না হাসির সেই হাসোজ্জ্বল চাহনি। অর্ণ আজও খুঁজে ফেরে হাসিকে। তবে সেটা একজন প্রেমিকের ভালোবাসার টানে বা একজন সাংবাদিকের কৌতূহল থেকে নয়। এক মানুষের প্রতি অন্য মানুষের ভালোবাসার আবেগে এবং মমতায়।

হাসির মতো মেয়েরা সমাজে কারও কাছে অতি প্রয়োজনীয়। আবার কারও কাছে অতি ঘৃণিত। আর তাদেরকে ঘৃণা করার কারণ হলো তাদের এই বেহায়াপনা পেশার জন্য। তবে সেই সভ্য জাতি, যারা হাসিকে বা হাসির পেশাকে খারাপ চোখে দেখে, তারা খুব সহজে হাসি সম্পর্কে মন্তব্য করবেহাসি একজন নষ্টা, দুশ্চরিত্রা, বেয়াদব মেয়ে। তবে কখনও কী তাদের মনে হয়েছে অথবা কখনও ভেবেছে আজ কেন হাসির এই অবস্থা, কেন সে আজ নিজেকে জড়িয়েছে এই পেশায়, সেও তো এক সময় স্বপ্ন দেখেছিল নিজ মেধায় নিজেকে মেলে ধরবে। তবে সে কি আদৌ ভেবেছে তার সেই মেলে ধরা কোনোদিন হয়ে উঠবে পরপুরুষের সামনে নিজেকে উলঙ্গ অবস্থায় উপস্থাপন? উগ্র পশুদের সাথে রাত্রি যাপন, নিজের সম্ভ্রমের বিনিময়ে? কখনও কী হাসি ভেবেছে সে একদিন হয়ে উঠবে বাজারের সস্তা দ্রব্যের মতো নরপিশাচদের রাত্রি যাপনের বিনোদন পণ্য? কখনও কোনো মেয়ে কি দুশ্চরিত্রা বা অসতী উপাধিগুলো নিজের করে নিতে চায়? আজ হাসি সমাজের কাছে নিজেকে কলঙ্কিনী রূপে উপস্থাপন করে সভ্য সমাজের কিছু মুখোশধারী ভদ্রলোকের ভোগ্যপণ্য হিসেবে নিজেকে বিক্রি করেছে সামান্য কিছু টাকা বিনিময়ে। যেই টাকা কিনা তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। তবে সত্যিকার অর্থে হাসির পেশা সমাজের চোখে খারাপ, নিষিদ্ধ হলেও আসলে হাসি কী অপরাধী? নাকি অপরাধী তার সমাজ? সেই সমাজের কিছু মানুষের জন্য হাসি আজ তার বাবারহাসি মাথেকে হয়ে উঠেছেপতিতা হাসি হাসিকে সমাজের কেউ সম্মান করবে না এটা ঠিক, কারণ সে সম্মান পাওয়ার মতো কিছু করে নি বা সম্মান পাওয়ার যোগ্য না। তবে এই সমাজের মানুষের বিন্দুমাত্র অধিকার নেই তাকে ঘৃণা করার, ঘৃণা যদি করতেই হয়, তাহলে ঘৃণা করা উচিৎ তার পেশাকে, তাকে নয়। আর তাই সেই খারাপের পেছনে পরোক্ষভাবে এই সমাজ। দিনেপতিতাবলে ধিক্কার দিলেও, কোনো একদিন সেই হবে সমাজের কোনো না কোনো মানুষের রাতের রজনী। টাকার বিনিময়ে তার এই পেশাকে সমাজ ঘৃণা জানায় বহুভাবে। অথচ সেই সমাজেরই বহু মানুষ তাকে আশা করে রাত্রী যাপনে। সমাজ কিন্তু ইচ্ছা করলেই পারে এই সব হাসিদের মুখে সত্যিকারের স্বস্তির হাসি ফুটাতে, আর তার জন্য প্রয়োজন এই ভদ্রসমাজের মুখোশধারী ভদ্র মানুষগুলোর নৈতিক মূল্যবোধের সত্যিকারের ইতিবাচক পরিবর্তন। সমাজ কি পারে না হাসিকে তার দেহের বিনিময়ে পারিশ্রমিক না দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে তাকে সহযোগিতা করতে? সমাজ কি পারে না বেঁচে থাকার তীব্র বাসনায় যে হাসির নিজেকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে উৎসর্গ করেছে এই নিষিদ্ধ পেশায়, তাদেরকে সত্যিকারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাতে। এসব কিছু ভেবেই চলেছে অর্ণ। মেলানোর চেষ্টা করছে একটা মানুষের জীবনের অংশ। ফলাফল শূন্য। তাতে কী? ভাবুক! আজ অর্ণ ভাবছে কাল আরেকজন ভাববে।       

 

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

                                   

উপন্যাস : হলুদ বাতির হাসি 

লেখক : শাহরিয়ার সোহাগ 

প্রথম প্রকাশ : অমর একুশে বইমেলা, ২০১৬।

এটা লেখকের ৩য় বই।


হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ১  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ২  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৩  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৪  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৫  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৬  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৭ 

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৮ 

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৯ 


 

No comments

Powered by Blogger.