Header Ads

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৬

শাহরিয়ার সোহাগ, story by Shahriar sohag, bangla poem pic, bangla poem, bangla love story, bangla sad story, bangla bosonto

তোমার সফর কেমন হলো? – কোনো প্রশ্ন না পেয়ে এমন একটা অপ্রস্তুত প্রশ্ন করলো অর্ণ।

: যার সাথে ছিলাম লোকটা অনেক বুড়ো। এই মনে করো লোকটা যদি ঠিক সময় বিয়ে করতো তাহলে আমার মতো তার একটা মেয়ে থাকত। বুড়োর জোর কমেছে। তবে রস কমে নি। আমাকে তো ছাড়তেই চায় না। সবসময় জড়িয়ে ধরে রাখে। বুড়োর ঐটা দাঁড়ায় না। সারা গা শুধু চেটেছে। আরে বুড়ো যা করবি কর। সারা গা চেটে থু থু দিয়ে ভরে দিয়েছে খাটাশটা। কিছু বলতেই পারি না। যে, টাকার বিনিময়ে যখন নিজেকে বিক্রি করি তখন আর আমি থাকি না। কেমন জানি নিজের সত্ত্বা হারিয়ে ফেলি। যখন বউ ফোন করে তখন আমাকে ইশারায় বলে চুপ করতে আর বউকে বলে মিস ইউ, মিস ইউ। তবে টাকা পয়সা ভালোই দিয়েছে। 

নিজেই নিজেকে বিসর্জনের কথা কী অবলীলায় বলে চলেছে হাসি। মুখে বাঁধছেও না। সতীত্ব হারিয়ে অনেক মেয়ে আত্মহত্যা করে। আর সেই সতীত্ব বিক্রির গল্পগুলো হাসি হাসতে হাসতে বলছে। 

এই নেও তোমার সারপ্রাইজ।

কী এই ব্যাগে? – কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো অর্ণ।

তোমার জন্য একটা গেঞ্জি এনেছি। কেমন হয়েছে দেখো তো।

শপিং ব্যাগ থেকে গেঞ্জিটা বের করলো অর্ণ। কালো টুপিযুক্ত গেঞ্জি। সামনে চেইন সিস্টেম। কালো গেঞ্জির সামনের পাশে সাদা রঙের বেশ কয়েকটা মোটা আড়াআড়ি স্টাইপ।

খুব সুন্দর। আমার পছন্দ হয়েছে।

যাক, শুনে খুশি হলাম।শব্দময় নিশ্বাস নিয়ে বললো হাসি।

: কী দরকার ছিল এটার?

: তুমি আমাকে একদিন খাওয়ালে। আমি তোমাকে একটা গেঞ্জি উপহার দিলাম।

তুমি শোধ নিচ্ছো নাকি? – ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করলো অর্ণ।

আরে না। তুমি তো আমার বন্ধু। তাই তোমাকে একটা গিফট করলাম।এক গাল হাসি দিলো হাসি।

আচ্ছা। কাল তাহলে আমি তোমাকে একটা চাদর গিফট করব।বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বললো অর্ণ।

: না। চাদর গায়ে দিলে তো আমার দেহ ঢেকে যাবে। গিফট যদি দিতে চাও তাহলে সেন্ট অথবা লিপস্টিক দিও। তাতে আমারও একটু উপকার হবে।

আচ্ছা। কাল নিও। 

তুমি এখন যাও তো।

হঠাত? কেন? – প্রশ্ন করলো অর্ণ।

যে গাড়ি আসছে। দেখি রাতটা কাজে লাগানো যায় কিনা।উত্তর দিলো হাসি।

আরেকটু বসি! – অনুরোধ করলো অর্ণ।

তাহলে তুমি বসো। আমি গেলাম।কথাটা শেষ করেই উঠে গেল হাসি।

কিছুক্ষণ পর অর্ণ দেখল সেই গাড়িতে উঠে হাসি চলে যাচ্ছে এক অজানা ঠিকানায়। কারও রজনীগন্ধা হতে। কিছু টাকার বিনিময়ে। বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছায় তার কাছে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিতে।

 

পরদিন রাতে আবারও সেই একই সময়ে একই জায়গায় হাসিকে আবিষ্কার করলো অর্ণ।

এই নাও তোমার পারফিউম, তোমার লিপস্টিক। সাথে একটা মেকাপ বক্স।প্রেমময় ঢঙ্গে বলল অর্ণ।

তুমি তো দেখছি আমাকে এক রাতের ভাড়ার টাকার চেয়েও বেশি টাকার গিফট দিলে। আমার মধু খাবে নাকি? চাইলে খেতে পারো। ডিসকাউন্ট না। তোমার জন্য পুরোটাই ফ্রি। কারণ তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। আমি জানি তুমি অন্য পশুদের মতো আমাকে খামচিয়ে খাবে না। প্রেমিকের প্রেম দিয়েই তুমি আমাকে ভোগ করবে। জানি তোমার যৌনতায় ভালোবাসা আছে।গিফট নিয়ে উত্তর দিলো হাসি।

হাসি, তুমি তো জানো আমি সাংবাদিকতার ছাত্র। তোমার কয়েকটা বিষয়ে আমি কৌতূহলী। 

আমার বিষয় নিয়ে! – হাসি যেন অবাক হলো।

: এই যেমন তোমার পরিবার, তোমার এই পথে আসা। তোমার লাইফ স্টাইল। তোমার বাসা কোথায়? তোমার নামটা অনেক সুন্দর, তোমার মতো।

তুমি কি সত্যিই শুনবে আমার সেই না বলা কথাগুলো? তোমার কী সময় হবে? এটা তোমার সময় নষ্ট করবে না তো? – কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে উত্তর দিলো হাসি। 

সময় নষ্ট হবে কেন? আমি তো নিজেই শুনতে চাইলাম।অর্ণ উত্তর দিলো।

সবাই আমার দেহটা ছিঁড়ে খায়। তবে আমি হাসি কেন যে আজ দেহ বিক্রি করি সেটা আজ পর্যন্ত কেউ শুনতে চায় নি। তুমিই প্রথম।খুব নরম গলায় বললো হাসি।

আমার হাতে যথেষ্ট সময় আছে। তবে তোমার হাতে আজ সময় আছে তো? – জানতে চাইলো অর্ণ।

আজ আর কাজে যাবো না। নিজের মনের কষ্টগুলো না হয় আজ তোমার সাথে শেয়ার করি। নিজেকে একটু হালকা করি।উত্তর দিলো হাসি।

বলো। আমিও জানতে আগ্রহী।প্রত্যুত্তর করলো অর্ণ।

দিনটা ছিল পরিবারের সবার জন্য খুশির সংবাদ। কারণ সেদিন পৃথিবীর বুকে আগমন ঘটবে এক শিশুর। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। ছেলে হবে কি মেয়ে হবে কেউ জানে না। বাবা ছিলেন একটু বেশি খুশি। আমন্ত্রিত অতিথিত জন্য তাই কাপড়, দোলনা, খেলনা কিনে রেখেছিলেন আগেই।

তিন ফেব্রুয়ারি। হাসপাতালে আনা হলো প্রসূতিকে। সবাই যখন জরুরি প্রসূতি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছে আমন্ত্রিত অতিথির জন্য। বাবা, দাদা, দিদা, নানা, নানী, ছোট মামা সবাই। সবার তখন একটাই ভয়। বাচ্চাটা না জানি আবার পঙ্গু কিংবা মৃত না হয়। আল্লাহর রহমতে তেমন কিছুই হলো না। তবে ঘটনার উল্টোটা হওয়াই বোধ করি ভালো ছিল।

উল্টোটা! – অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অর্ণ।

: কিছুক্ষণ পর ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল। সবাই খুশি হয়ে জোরে সরে বললো আলহামদুলিল্লাহ। ভেতর থেকে একজন নার্স এসে বললেনখুশির খবর, মেয়ে হয়েছে। তবে

তবে কী? – উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলো অর্ণ।

: মেয়ের বাবাও এইতবেপ্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে নার্স জানালেন সেই অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদটা। যার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই।

কী সেটা। –  প্রশ্ন করলো অর্ণ।

: মেয়েটার মা বাচ্চা হবার সময় মারা গেছেন। সবার একসাথে সেই চিৎকার হাসপাতালের ঘুমন্ত, অসুস্থ রোগীদেরকেও জাগিয়ে তুললো। একটা শিশু জন্মের পরেই তার মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠে। সবাই ভাবে শিশুটা কাঁদছে। আসলে সে কাঁদে না। মায়ের চোখে তার চোখ পরে। মা তাকে দেখে হেসে উঠেন। শিশুটাও হেসে উঠে। জন্মের পরেই চোখ খুলতে যে তার মা জননীর দরদমাখা মুখটা দেখে। তাই সে যেন একটু বেশিই খুশি থাকে। আর তার সেই বেশি খুশির হাসি কান্নায় রূপ নেয়। সবাই রুমের ভেতর ঢুকল। দেখল শিশুটা কাঁদছে আর নিজের মুখে নিজে খামচাচ্ছে। সে যেন তখন তার মায়ের মৃত্যুর জন্য নিজেকে সবচেয়ে বেশি অপরাধী মনে করছিল। সে হয়তো ভাবছিল তার মায়ের মৃত্যুর জন্য সেই দায়ী। বাবা সেদিন হারিয়েছিলেন তার প্রিয় স্ত্রীকে। নানা নানু তাদের মেয়েকে। দাদা দীদা তাদের প্রিয় বৌমাকে। মামা তার প্রিয় বোনকে। আচ্ছা অর্ণ, এই কি হলো ভাগ্যের নির্মম পরিণতি? মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই শিশুটা জন্ম নিলো। মায়ের স্বপ্ন পূরণ হলো। তবে মা তার স্বপ্নের পরিপূর্ণ রূপ দেখতে পারলেন না।

: সো স্যাড। 

: শিশুটার পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে কান্না দিয়ে। আর এসে কাঁদিয়েছে সবাইকে। তাই বাবা চেয়েছিলেন এমন একটা নাম দিতে যেন তাকে আর কাঁদতে না হয়। বাবা মেয়েটির নাম রেখেছিলেন হাসি।

হাসি? এটা কি তুমি? – কৌতূহলী অর্ণর কৌতূহল বেড়ে গেল।

: হ্যাঁ, হাসি। আমিই সেই দুর্ভাগা হাসি।

সরি হাসি। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। তুমি যদি আর না বলতে চাও আমার আপত্তি নেই।অপরাধ ভেবে প্রত্যুত্তর করলো অর্ণ।

: জীবনে প্রথম কেউ আমার জীবনের গল্প শুনতে চেয়েছে। আর আমি বলবো না! আমি বলবো। তোমাকে আজ আমি সব বলবো। কারণ আমার এই কষ্টগুলো আমি আর বইতে পারছি না। তোমার বলার পর আমার কষ্ট যদি একটু কমে।

: আচ্ছা হাসি। তবে বলো। আমি শুনবো।

শুরু করলো হাসিআমার বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। নানা নানু চেয়েছিলেন তাদের মেয়ের স্মৃতি তাদের কাছে রাখতে। তবে বাবা আমাকে তাদের কাছে দেন নি। চেয়েছিলেন নিজের সন্তানকে নিজের কাছে রেখেই মানুষ করতে। সেই মুহূর্তে মারা গেলেন দীদা। আমাকে লালনপালন করাটাই দুঃসহ হয়ে উঠে পরিবারের কাছে। সবার পরামর্শে আর অনুরোধে বাবা রাজি হন দ্বিতীয় বিয়ে করতে। বলো এমন সৌভাগ্য জনের হয় নিজের বাবার বিয়ে দেখার।

তারপর?

: তারপর সেই মহিলাটি আমার দেখাশুনা করত। একসময় অল্প অল্প করে বুঝতে শিখলাম। ওই মহিলারও একসময় এক সন্তান হলো। একটা ছেলে। বাবা সবসময় আমাদের দোকান নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন।

দোকান? কিসের দোকান? – প্রশ্ন করলো অর্ণ। 


২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

                                   

উপন্যাস : হলুদ বাতির হাসি 

লেখক : শাহরিয়ার সোহাগ 

প্রথম প্রকাশ : অমর একুশে বইমেলা, ২০১৬।

এটা লেখকের ৩য় বই।


হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ১  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ২  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৩  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৪  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৫  


হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৭ 

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৮ 

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৯ 

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ১০ 

No comments

Powered by Blogger.