Header Ads

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৫

শাহরিয়ার সোহাগ, story by Shahriar sohag, bangla poem pic, bangla poem, bangla love story, bangla sad story, bangla bosonto

হঠাতই বদলে গেল চেনা হাসির চেনা কণ্ঠস্বর।তোমার মতো পুরুষ আমার চিনতে বাকি নেই। ফ্রি ফ্রি মজা লুটতে প্রতি রাতে আসো এখানে। আমার প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে কোনোদিন আমার গায়ে খারাপভাবে হাত দাও নি সুযোগ পেয়েও। আমি মানছি তুমি ভালো। তবে তুমি কি পারবে আমাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে? আমাকে আমার আগের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে? পারবে না। তুমি আদৌ পারবে না। আমার মতো হাসির মুখে সারাজীবন হাসি থাকবে। তবে আমাকে তোমার ভালো লাগবে একদিন, দুইদিন। আমাকে বিয়ে করে একটা পরিচয় দেওয়া তো দূরের কথা, ভালো করে মিশতেও পারবে না আমার সাথে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব যখন জানবে তুমি চলাফেরা করছো এক নষ্টা, বেশ্যা, পতিতার সাথে, তারা যখন আমার জন্য তোমাকে অপমান করবে, তাচ্ছিল্য করবে, তখন তুমি ঠিকই রাতের বেলা এই ফুটপাতে আসা বন্ধ করে দিবে। আর আমি? আমি হাসি তখনও এখানে আসব। কী শীত, কী গরম, একটা মাত্র জামা পরে তখনও আমি এই হলুদ লাইটটার নিচে দাঁড়িয়ে হাসবো, কোনো না কোনো পথচারীর নজর কাড়তে। পশুদের সাথে রাত কাটিয়ে খাবারের টাকা জোগাড় করতে।

কথা শেষ করেই চোখ ভরা পানি নিয়ে হাসি আবারও দৌড় দিলো তার পরিচিত কাজে অপরিচিত গন্তব্যে। হয়তো বা কারও বাসায়, অথবা কোনো হোটেলে। কষ্ট হলেও সে হয়তো কান্না ভুলে স্বাভাবিক হতে চেয়েছিল। কারণ হাসির হাসিতেই মুগ্ধ হবে সেই রাতের নরখাদক।

 

ব্যস্ততার জন্য অর্ণ বেশ কিছুদিন যেতে পারে নি সেই হলুদ বাতির ফুটপাতে। আর হাসিও যোগাযোগ করে নি প্রকাশ্য কারণে। অর্ণ ওর কোনো বন্ধুর সাথে হাসির ব্যাপারটা শেয়ার করতে পারছে না। কারণ অর্ণ বুঝেছে যে হাসির ব্যাপারটা কেউ স্বাভাবিকভাবে নিবে না। হঠাত এক দুপুরে অর্ণর ফোনে একটা নাম্বার থেকে ফোন আসল। নাম্বারটা সেভ করা ছিল বলে অর্ণ সহজেই তাকে চিনতে পারল। তবে এখন তো দুপুর। তাহলে সে কি আজ ঘুমায় নি?

হ্যালো।

হাসি বলছি।অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এলো।

হ্যাঁ চিনেছি। তোমার নাম্বারটা সেভ আছে। তুমি তো দিনে ঘুমাও। তাহলে? – কথার প্রত্যুত্তরে অর্ণর প্রশ্ন।

পেটে ক্ষুধা থাকলে কী আর ঘুম আসে? আমার ফোন নাম্বার তুমি সরাসরি সেভ করে রেখেছো? আমার জন্য দেখছি তোমার ভালোবাসা উপচে পড়ছে।হাসতে হাসতে কথাগুলো বলছে হাসি।

হঠাত এমন সময়? কী মনে করে? – জানতে চাইলো অর্ণ।

না, বেশ কিছুদিন আসছো না তো, তাই।উত্তর দিলো হাসি।

আসলে আমি হঠাত করে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম তো, তাই।

একটা উপকার করবা? – প্রশ্ন করলো হাসি

কী, কোনো টাকা পয়সা লাগবে? – জানতে চাইলো অর্ণ।

তোমার অনেক টাকা নাকি? শুধু টাকা টাকা করো।

না, তেমন টা না। কী উপকার বলো।অর্ণ জিজ্ঞেস করলো হাসিকে।

: আমাকে আজ দুপুরে খাওয়াতে পারবা?

এতে আবার উপকারের কী হলো? কোথায় খাবে? কী খাবে? তুমি এখন কোথায়? আমি কী আসব? – এক সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো অর্ণ।

না। তাহলে তুমি আমার বাসা চিনে ফেলবে। তুমি কোথায় আছো বলো। আমি আসছি। হাসতে হাসতে নিজের অবস্থান লুকানোর চেষ্টা করলো হাসি।






দুজন তখন আজিজ সুপারের দোতালায় এক রেস্টুরেন্টে। খাবারটা কেমন লাগলো? – কথা বলা শুরু করার জন্য প্রশ্ন করলো অর্ণ।

অনেকদিন পর পেট ভরে খেলাম। খাবারটা ভালোই লেগেছে। তবে পেটে ক্ষুধা সেজন্য নাকি রান্না ভালো হয়েছে বুঝলাম না।এক গাল হাসি দিয়ে  উত্তর দিলো হাসি।

আর কিছু নেবে? – জানতে চাইলো অর্ণ।

: বলছো যখন, কোল্ড ড্রিংস নেওয়া যায়। শোন, আমি এক সপ্তাহ থাকব না। তুমি আবার সারারাত ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তারা গুনো না।

কেন? কোথায় যাবে তুমি? – প্রশ্ন করলো অর্ণ।

মালদার এক কাস্টমার পেয়েছি। এক সপ্তাহের জন্য ঢাকার বাহিরে থাকবো। অনেক বড় লোক। টাকা বেশি দিবে মনে হচ্ছে।উত্তর দিলো হাসি।

তবে হঠাত লাঞ্চ করতে চাইলে যে? – হাসির বর্তমান জীবনের কথা এড়াতে প্রশ্ন করলো অর্ণ।

তোমাকে একথা বলার জন্য আসতে বললাম। মাঝে একটু পেট ভরে খেয়ে নিলাম তোমার টাকায়। রাগ করলে নাকি? – কথা শেষ করেই এক গাল হাসি দিলো হাসি।

: না না। ইটস ওকে

: আবারও ইংরেজি?

: ভুলে বলে ফেলেছি। না কোনো সমস্যা নেই।

আজ তাহলে উঠি।বিদায় নিতে চাইলো হাসি।

এখনই চলে যাবে? – জানতে চাইলো অর্ণ।

হ্যাঁ, রেডি হতে হবে তো।উত্তর দিলো হাসি।

আচ্ছা যাও।একটু মন খারাপ করেই উত্তর দিলো অর্ণ।

ফিরে এসে দেখা হবে।বিদায় নিলো হাসি।





সময়ের স্রোতে হাসির জীবনেও পার হয়ে গেল সাতটা রাত। ঢাকাতে থাকলে হয়তো সাত রাত সাত জনের সাথে থাকতে হতো। হয়তোবা দুই এক রাত বেকার কাটত। এদিকে হাসি আসে না বলে অর্ণও এই দিন যায় নি সেই মাঝরাতের জ্বলন্ত সরকারি লাইটের নিচের ফুটপাতে। তারপর এক রাতে বারোটার দিকে অর্ণ হলে ফিরেছে মাত্র। মোবাইলটা বেজে উঠল অর্ণর। হাসি ফোন করেছে।

হ্যাঁ বলো।

: হাসি বলছি। 

: চিনেছি। কোথায় তুমি?

সরকারি রাস্তার সরকারি লাইটের নিচে।মুচকি হেসে উত্তর দিলো হাসি

ফিরলে কবে? – জানতে চাইলো অর্ণ।

: আজ বিকেলে। তুমি আজ আসবে না?

: তুমি ছিলে না তো, তাই যেতাম না।

এখন তো আছি। আসবা নাকি? – কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো হাসি।

এখন? – না সূচক ভঙ্গিতে উত্তর দিলো অর্ণ।

: অনেকদিন তোমার সুন্দর মুখখানা দেখিনা। আজ আবহাওয়াটা খারাপ, মনে হয় কাস্টমার পাব না। তোমার সাথেই আজ গল্প করবো। আসবা নাকি?

কোনো উত্তর দিলো না অর্ণ।

ভয় পাচ্ছো নাকি? – একগাল হাসিতে অর্ণকে প্রশ্ন করলো হাসি।

না, ভয় পাব কেন? – উত্তর দিলো অর্ণ।

আরে আসো। তুমি তো মৌমাছির পাশেই বসবা। মধু তো আর খাবা না। তোমার তো সেই সাহস নেই।কেমন জানি একটা দাবি নিয়ে কথা বললো হাসি।

: তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো। আমি আসছি।

আসো আসো। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।হাসির কথাটা ছিল রহস্যে ঘেরা।

সারপ্রাইজ! – অবাক হলো অর্ণ।

: আগে আস। তাহলেই বুঝবা।

 

কিছুক্ষণ পর অর্ণ আসল। 

কী সারপ্রাইজ? – কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো অর্ণ।

: সারপ্রাইজ দিতে যখন ডাকছি। অবশ্যই দেব। আগে তো বসো।

তোমার সফর কেমন হলো? – কোনো প্রশ্ন না পেয়ে এমন একটা অপ্রস্তুত প্রশ্ন করলো অর্ণ।


২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

                                   

উপন্যাস : হলুদ বাতির হাসি 

লেখক : শাহরিয়ার সোহাগ 

প্রথম প্রকাশ : অমর একুশে বইমেলা, ২০১৬।

এটা লেখকের ৩য় বই।


হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ১  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ২  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৩  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৪  


হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৬  

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৭ 

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৮ 

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ৯ 

হলুদ বাতির হাসি || শাহরিয়ার সোহাগ || পর্ব - ১০ 

No comments

Powered by Blogger.